বিভিন্ন অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়; তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির বিষয় বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া পবিত্র রমজান মাস এলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, রমজানে অযৌক্তিকভাবে কেউ যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য মাঠে থাকবে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার জানিয়েছেন, রমজান মাসে কোনো কুচক্রী মহল যেন বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ডিএমপি।
আমরা মনে করি, রমজানে অযৌক্তিকভাবে কেউ যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। আর যখন জানা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যে মাঠে থাকবে পুলিশ- তখন এটি আশাব্যঞ্জক। উলেস্নখ্য, রোজার বাজারে দেখা যায় প্রায় প্রতি বছরই দাম বাড়ে চিনির। এবার দাম কমাতে পণ্যটি আমদানিতে কিছুটা শুল্কছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতে আগের চেয়ে মাত্র ৬৮ পয়সা কম শুল্ক দিয়ে এক কেজি চিনি আমদানি করা যাচ্ছে। ফলে চিনির দাম কমছে না- এমনটি জানা যাচ্ছে। এছাড়া বাজারে চিনির মতো চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখনো চড়া এমন তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া লক্ষ্য করা দরকার, প্রতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে শীতকালীন সবজির দাম অনেকটাই কমে যায়। এবার সেখানেও উল্টো চিত্র। সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। আবার যদি রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিংবা কুচক্রীরা কারসাজিসহ মানুষকে জিম্মি করতে চেষ্টা করে তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক হবে সেটা আমলে নেওয়া জরুরি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
স্মর্তব্য, রমজান মাসসহ বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং নানা ধরনের অভিযোগও বিদ্যমান। ফলে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। এছাড়া, এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগও উঠেছিল যে, সরকার কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অথচ এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, নিত্যপণ্যের দাম যদি চড়া হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগের! মনে রাখা দরকার, এর আগে ক্রেতার চাপের সুযোগ নিয়ে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগও নতুন নয়। ফলে, বিভিন্ন অজুহাতকে সামনে রেখে কোনো সিন্ডিকেট বা অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা বলতে চাই, যখন প্রয়োজনীয় দ্রব্যর দাম বৃদ্ধি পায়, তখন তা জনসাধারণের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে- সেটা এড়ানো যাবে না। সার্বিক চিত্র আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় তৎপরতা বজায় রাখা এবং নিতপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন মানুষকে জিম্মি করতে না পারে সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। কৃত্রিম সংকটসহ যে কোনো কারণেই কেউ যেন ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে না পারে, সেই লক্ষ্যে মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দায় চাপানো কিংবা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কিংবা চাহিদা বেশি বলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে এমনটিও কাম্য নয়।
সর্বোপরি বলতে চাই, রমজানে অযৌক্তিকভাবে কেউ যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য মাঠে থাকবে পুলিশ- এটি ইতিবাচক, যা আমলে নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, যদি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটি স্বাভাবিক। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছিল যে, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না অনেকের। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; একইসঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।