ওষুধ রপ্তানিতে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার নয়শ' কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার নয়শ' তিন টাকার ওষুধ রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, এখন ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের ওষুধ রপ্তানি করা হয়।
যেসব দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানি করা হয় সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আফগানিস্তান, আজারবাইজান, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, ইরান, জর্ডান, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ম্যাকাও, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, তাইওয়ান, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন, লেবানন, কুয়েত, কাতার, ওমান, উপসাগরীয় দেশগুলো (জিসিসি), তুর্কমেনিস্তান কাজাকিস্তান, বাহরাইন, ব্রম্ননাই দারুস সালাম, দুবাই, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রাশিয়া, রোমানিয়া, স্স্নোভেনিয়া, স্স্নোভাকিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন।
এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে আমাদের এ দেশ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২৫০ বিলিয়ন ডলার। দেশে এখন ২৫৭টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ১৫০টি সক্রিয়ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, দেশে জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো ওইসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং আবারও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এটা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বাজার তদারকির কেউ নেই। আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী- যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি ওষুধ রপ্তানিতে আরো মনোযোগী হওয়া জরুরি।