সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির সংঘাত অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এর জের ধরে সীমান্তে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো পুরোপুরি কাটেনি- এমনটি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। তথ্য মতে, কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফ নদের ওপারে গত মঙ্গলবারও গোলাগুলি হয়েছে। এ ছাড়া উখিয়া সীমান্তের ওপারেও কয়েকটি জায়গায় গোলাগুলি হয়েছে। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ পেয়েছেন সীমান্তের মানুষজন- এমনটি জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি এপারে। যদিও সীমান্ত দিয়ে যাতে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে, সেজন্য বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
আমরা মনে করি, সীমান্তে যে আতঙ্ক সৃষ্ট হয়েছে সেটি আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। এটাও জানা যাচ্ছে যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে জ্বালানি, ভোজ্যতেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেৃেত্র উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ একটি চক্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।র্ যাব জানিয়েছে, সোমবার রাতে পাচারের চেষ্টাকালে বেশ কিছু নিত্যপণ্য জব্দ করা হয়েছে। আর এ সময় দুইজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপও অব্যাহত রাখতে হবে।
বলা দরকার, এর আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ছিল বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। আমরা বলতে চাই, যখন এখনো আতঙ্কা কাটেনি তখন পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে জান্তাবিরোধীগোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩শ'র বেশি সামরিক চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে। সাম্প্রতিক সমেয় মিয়ানমারে চলা ওই সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণাও করেছিল প্রশাসন।
সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেছেন, 'এমনিতেই মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছে। রোহিঙ্গা বা যেই আসুক, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।' ফলে আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। এছাড়া স্মর্তব্য, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকেও এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।