পাহাড়ে অপহরণ বাণিজ্য কার্যকর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অপহরণের ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক এবং ভীতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, পটিয়ায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা আবারও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে অপহরণ শুরু করেছে। খবরে উঠে এসেছে যে, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়ে উপজেলার পাহাড়ি এলাকার লোকজন বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছে। কেননা, দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন পাহাড়ে ধরে নিয়ে পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতি কতটা ভীতিপ্রদ সেটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে পাহাড়ে ধরে নিয়ে জিম্মি করে, সন্ত্রাসীরা তাদের স্বার্থ আদায়ে মরিয়া হবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে জিম্মি হয়, অন্যদিকে, নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়ে। তথ্য মতে, প্রায় সময় উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, শ্রীমাই পাহাড় ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মহড়া চলছে বলে স্থানীয় দিনমজুর ও কাঠুরিয়ারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, পাহাড়ে যারা গাছ বাগান, লেবু বাগানসহ দিনমজুরের কাজ করেন এমন লোকজনকেও ধরে নিয়ে জিম্মি করে তাদের পরিবার এবং মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতি সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েক বছর ধরে পটিয়া, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, দোহাজারি, চন্দনাইশ এলাকার গহিন অরণ্য থেকে এসব সন্ত্রাসীর আনাগোনা বেড়েছে। এটাও লক্ষণীয়, পটিয়া, বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলকে ঘিরে কৃষি অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। নানা ধরনের ফলমূল থেকে শুরু করে গাছের বাগান সৃজন করে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা ও বাগান মালিকরা। ফলে সম্ভাবনাময়ী কৃষি অর্থনীতির এসব পাহাড়ে যদি অপহরণ বাণিজ্যর ঘটনা ঘটে- তবে এটি কতটা উৎকণ্ঠার তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। আমরা বলতে চাই, যখন এসব গহিন পাহাড়ে আস্তানা গেঁড়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী- তখন এটার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর হতে হবে। শ্রমিক ও বাগান মালিকদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, গত তিন বছরে অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিককে আটকে রেখে কয়েক লাখ টাকার মুক্তিপণ আদায় করেছে সন্ত্রাসীরা। জীবন-জীবিকার তাগিদে যাওয়া নিরীহ শ্রমিকদের পাহাড় এখন আতঙ্ক ও শঙ্কায় পরিণত হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলা দরকার, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ১১ দিনমজুরকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে অভিযোগ আছে। জানা যায়, পটিয়ার খরনা ইউনিয়নের লালারখীল এলাকা থেকে ওই ১১ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্ত করেন। গত বছরের ১২ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার ১৪ লেবু বাগান শ্রমিক অপহৃত হন। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান সাত শ্রমিক। এছাড়া নানা ধরনের অপরাধ ছাড়াও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাহাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় 'অভয়াশ্রম' গড়ে তুলেছে বলেও আলোচনায় এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও জিম্মি করার ঘটনায় পাহাড়ের আশপাশের জনবসতির লোকজন আতঙ্কে দিন যাপন করছেন এবং সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণ ও তাদের চাঁদাবাজি এখন নিত্যদিনের ঘটনা হলেও লোকজন ভয়ে মুখ খুলছেন না এবং থানায়ও যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পটিয়ার পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের যে অপহরণ বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্য সামনে আসছে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে শুধু পটিয়ার পাহাড়েই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে অপরহরণসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। সেসবও আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।