গত এক দশকে দেশে বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়েছে। এমন মৃতু্য রোধে সারাদেশে ৬৭৯৩ বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এ কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। মহিবুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি। বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা কমানোর নিমিত্ত জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পৌরসভা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বজ্রপাত হতে রক্ষা পাওয়ার উপায়গুলো প্রচারের জন্য পোস্টার-ব্যানার প্রস্তুত করে জেলা, উপজেলা সদর, স্কুল, কলেজ, হাট বাজার ও জনসমাগম হয় এমন স্থানে লাগানো এবং মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম-পুরোহিতদের মাধ্যমে প্রচার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের অধিক বজ্রপাত প্রবণ পনেরোটি জেলায় ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অধিক বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলায় বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট প্রাণহানি রোধে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপনের জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে বজ্রপাত হতে সুরক্ষার জন্য ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপন করা হবে। এই উদ্যোগ ইতিবাচক।
এটা সত্য বজ্রপাতে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। এটা রোধে বড় বড় গাছ লাগাতে হবে। তাল, নারকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নেয়। আগে গ্রামগঞ্জে এ ধরনের গাছ বেশি ছিল। ফলে বজ্রপাত হলেও মানুষ বেঁচে যেত। কিন্তু এখন এসব গাছের বড়ই অভাব। এ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখন মুঠোফোন থাকছে। অধিকাংশ এলাকায় মুঠোফোন ও বৈদু্যতিক টাওয়ার রয়েছে। কৃষিতেও যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা।
উলেস্নখ্য, ২০১৬ সালে বজ্রপাতে প্রায় ৩৫০ মানুষ মারা যাওয়ার পর সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা এবং সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু এসব পরিকল্পনা ও কর্মসূচি যে খুব একটা কাজে আসছে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সরকার বজ্রপাত রোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ২৮ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়নও হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু তালগাছ বড় হতে সময় লাগে, সেহেতু দ্রম্নত লম্বা হয় এমন বড় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দেখা যায়, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ মাঠে খেটেখাওয়া সাধারণ চাষি গেরস্ত। বজ্রপাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হলে মাঠের মাঝখানে বাবলা, হিজল, সুপারিসহ এ ধরনের গাছ লাগাতে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। ভূমিকম্পের মতো বজ্রপাতের সময় মানুষের কী কী করা উচিত, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হবে। সরকার বজ্রপাতের আগাম সংকেত দেওয়াসহ প্রযুক্তিনির্ভর আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চাই, এসব পদক্ষেপ দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা হোক।