সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বস্ন্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭। আর সারাদেশে লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বস্ন্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৩। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে বলে রোববার হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে, সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বস্ন্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭ হলে তা কতটা উদ্বেগের সেটা যেমন আমলে নেওয়া জরুরি; তেমনিভাবে অবৈধ হাসাপাতাল ও ক্লিনিক কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালালো সেটাও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
উলেস্নখ্য, রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সি শিশু আয়ানের মৃতু্যর ঘটনা নিয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুলস্নাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। শিশু আয়ানের মৃতু্যর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে সারাদেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে তার তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়।
আমরা বলতে চাই, যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে যে, সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বস্ন্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭। তখন এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সময়েই অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতাল সংক্রান্ত তথ্য সামনে এসেছে। এছাড়া রোগীর কল্যাণ তথা জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকার অভিযোগও নতুন নয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এটাও সামনে এসেছিল যে, দেশের আনাচে-কানাচে লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এখন যখন লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ৎ ও ক্লিনিক সংক্রান্ত তথ্য জানা যাচ্ছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানহীন ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
লক্ষণীয়, নানা সময়ে এমন আলোচনা এসেছে, সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও আন্তরিকতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা যুগোপযোগী ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। এছাড়া প্রচলিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশের মানুষ পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে এটাও জানা গেছে বিভিন্ন সময়ে। অন্যদিকে, এর ফলে, অনেকেই সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে বলেও জানা যায়। যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি বলেই প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই এ অবস্থার অবসানে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে সরকার কোনো ছাড় দেবে না, এটাই প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে অভিযান চালানো এবং অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঘটনাও ঘটেছে- যা ইতিবাচক। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে এবং অবৈধ ক্লিনিক, হাসাপতাল বন্ধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, দেশের জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। ফলে মানহীন ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ কতটা জরুরি, তা এড়ানো যাবে না। কেননা, অবৈধ প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালালে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আর্থিক ক্ষতি যেমন হবে, তেমনিভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা যাবে- যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্মর্তব্য, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা ধরনের সংকটের বিষয়ও আলোচিত। ফলে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা দূর করতেও উদ্যোগ নিতে হবে। রোগীরা চিকিৎসার নামে যেন কোনোভাবেই কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার না হন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।