পাঠক মত
রক্তদানে ভয় নয়
প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
এই পৃথিবীর নিঃস্বার্থ দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান রক্তদান। যে দানের মাধ্যমে বাঁচতে পারে একটি মুমূর্ষু রোগীর জীবন। দুর্ঘটনায় আহত, ক্যানসার বা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগে রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হয়। সাধারণত দুই ধরনের রক্তদাতা দেখা যায়। প্রথমত, স্বেচ্ছায় রক্তদান যেটা হচ্ছে কোনো ধরনের অর্থ, উপহার ছাড়াই সামাজিক জীব হিসেবে অন্যের জন্য নিজের রক্ত দান করে। এটা হতে পারে আত্মীয়, অপরিচিত কোনো মানুষ। দ্বিতীয়ত, পেশাদার রক্তদাতা, অর্থাৎ তারা অর্থ বা কোনো ভাতার বিনিময়ে রক্তদান করে থাকেন।
কেন রক্ত দেবেন?
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের জন্য আমাদের সবার দায়িত্ব থাকে। আমার দেওয়া এক ব্যাগ রক্ত একটি মানুষের জীবন রক্ষা করে, সুস্থ হতে সাহায্য করে, বড় কোনো শঙ্কা থেকে রক্ষা করে। এজন্যই আমাদের রক্ত দেওয়া উচিত। মানুষ হিসেবে আমরা কেউ একা বেঁচে থাকতে পারব না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা সবাই একে অপরকে ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভর করি। রক্তদানের মতো মূল্যবান উপহার আর কি হতে পারে! তাই সামাজিক জীব হিসেবে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে আমাদের নিজেদের রক্তদান করা এবং অন্যকে রক্তদানে উৎসাহ করা সামাজিক দায়িত্বের একটি অংশ।
কারা রক্ত দিতে পারবে
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারবেন।
-১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
-যাদের ওজন ৪৮ কেজি বা তার বেশি তারা রক্ত দিতে পারবে।
-কোনো ব্যক্তি একবার রক্ত দেওয়ার ৪ মাস পর আবার রক্ত দিতে পারবেন।
-পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগেস্নাবিন প্রতি ডেসিলিটারে ১৫ গ্রাম এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৪ গ্রাম হওয়া দরকার।
-রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে।
কারা রক্ত দেবেন না
হিমোগেস্নাবিনের মাত্রা কম (পুরুষদের ন্যূনতম ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের ন্যূনতম ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার হতে হবে) থাকলে।
রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া ওই মুহূর্তে উচিত নয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, যেমন হাঁপানি বা অ্যাজমা।
রক্তবাহিত রোগ যেমন, হেপাটাইটিস বি বা সি, জন্ডিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে না। তাছাড়া টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, বাতজ্বর, হৃদরোগ থাকলেও রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
নারীদের মধ্যে যারা অন্তঃসত্ত্বা ও যাদের ঋতুস্রাব চলছে তারা রক্ত দেবেন না, সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যেও না।
যারা কিছু ওষুধ সেবন করছেন, যেমন- কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি তারা সে সময় রক্ত দেবেন না।
যাদের বিগত ছয় মাসের মধ্যে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়েছে তারা রক্ত দেবেন না।
রক্তদানে কোনো সমস্যা হয়
রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। একজন মানুষের শরীরে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদান করা হয় সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার। এটি শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র অল্প ভাগ। রক্তদানের পর সাময়িক খারাপ লাগতে পারে। তবে সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
রক্তদান করলে কি উপকার হয়
রক্তদানের পর শরীরের মধ্যে অবস্থিত অস্থিমজ্জায় নতুন কণিকা তৈরির জন্য সক্রিয় হয় এবং রক্তদানের দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। বছরে তিনবার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। উলেস্নখ্য রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক, রক্তচাপ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা তা বিনা খরচে জানা যায়। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
\হওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকে। রক্ত সংগ্রহ করা হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ লাখ ব্যাগ। দেশে মোট রক্ত চাহিদার চেয়ে কম মানুষ রক্ত দান করে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির তথ্য বলছে, দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, যার অধিকাংশ শিক্ষার্থী। দেশে রক্তদাতার অনেক ঘাটতি আছে।
রক্তদান করতে অনেকে ভয় পাই, আবার অনেকে শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে মনে করে। কিন্তু আসলে রক্তদানে রক্তদাতার কোন সমস্যা হয় না। রক্তদানে রক্তদাতার উপকার হয় পাশাপাশি রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত গ্রহীতারও উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার পর কিছুটা মাথা ঘোরা বা কিছুটা অস্থিরতা বোধ হতে পারে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব স্বেচ্ছায় রক্তদান করার পাশাপাশি অন্যকে উৎসাহ দান করা। রক্ত দানের কথা বললে, আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, অজুহাত দেওয়া এসব বাদ দিয়ে রক্তদানে উৎসাহিত হতে হবে, অন্যকে উৎসাহ দিতে হবে। আজ আমার প্রয়োজন আপনি, কাল আপনার প্রয়োজনে আমি রক্ত দেব। এই মনোভাব পোষণ করতে পারলেই দেশে রক্তের মোট ঘাটতি পূরণ হবে।
আরিফুল ইসলাম
শিক্ষার্থী
ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষককে বাঁচিয়ে রাখুন
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের ৭০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪০.৬ ভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কৃষকরা কি তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে? এর নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অব্যবস্থাপনা, মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ না থাকা, অপর্যাপ্ত গবেষণা, বিনিয়োগের অভাব, কৃষি সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধি, দালালের দৌরাত্ম্য, অবহেলা, বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করা, ইত্যাদি। অপরদিকে, অধিক মুনাফা লাভে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। কৃষকরা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত গুদাম না পাওয়ায়, পণ্য নষ্ট হওয়ার ভয়ে অল্পমূল্যে তাদের কাছে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। দেশের কৃষিখাত বাঁচাতে ও কৃষকদের প্রাপ্য অধিকার রক্ষার জন্য যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দেশ থেকে দালাল ও সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে শাস্তি আওতায় আনা হোক। এ ছাড়াও দেশে অনুন্নত গবেষণা খাত, উন্নত প্রযুক্তির অভাব, কৃষি-বিষয়ক উচ্চতর গবেষণা ও কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ফসল উদ্ভব করা সম্ভব হলে, কৃষিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
অতএব, কৃষি খাতে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ করা হোক। আর কৃষকের ন্যায্যমূল্য, অধিকার রক্ষা ও বিভিন্ন ভর্তুকি প্রদানসহ, উৎসাহমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জান্নাতুল ফেরদৌস
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া