বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১

সড়কে মৃতু্যর মিছিল

কার্যকর উদ্যোগ নিন
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সড়কে মৃতু্যর মিছিল

সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে ডুমুরিয়া উপজেলার আঙ্গারদোহা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে ট্রাক ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা নিহত হন। নিহতরা হলেন- আঙ্গারদোহা গ্রামের হান্নান মোড়লের ছেলে সাব্বির মোড়ল, জিয়েলতলা গ্রামের বিষ্ণু বিশ্বাসের ছেলে ইজিবাইক চালক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, বিশ্বজিতের শ্যালক এর স্ত্রী নিপা ঢালী, বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের ৩ বছরের মেয়ে অর্নি বিশ্বাস এবং বিশ্বজিতের শাশুড়ি ভৈরবী মন্ডল। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত ২ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর কদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ৩ জন করে এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম, কক্সবাজারের ঈদগাঁও, ফেনী, শেরপুরের নকলা, মেহেরপুরের গাংনী ও ঢাকার ডেমরায় একজন করে নিহত হন। এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে- মালবাহী পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষ, শ্যালো ইঞ্জিলচালিত ভটভটির সঙ্গে মালবাহী ট্রাকের সংঘর্ষ, ট্রলি গাড়ির ধাক্কায়, কাভার্ড ভ্যানের চাপাসহ রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের ধাক্কায়।

যেভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা- তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠেছে তা আমলে নিতে হবে। যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামিগ্রক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে জানা গিয়েছিল যে, ২০২৩ সালে সারাদেশে পাঁচ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ২৪ জন নিহত হয়েছেন। ফলে সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠছে তা এড়ানো যাবে না।

যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এর আগে বারবার এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও সামনে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।

আমরা মনে করি, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে