বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে বেকার সমস্যা। দিনে দিনে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণে করছে। প্রবাদে আছে, কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে মোড়া। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কেউ যদি বেকার বা কর্মহীন থাকে তা হলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বলা হয়ে থাকে বেকার মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যক্তির নিজের কাছেও সে এখন বোঝা। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে হতাশায় ভোগে তরুণরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যে সামাজিক অবক্ষয় চরমে এর প্রধান কারণ বেকারত্ব। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সুতরাং, বেকার লোক সুযোগ পেলে যে কোনো অপরাধ সংঘটিত করতে পারে।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদের বিপরীতে ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি শূন্যপদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরণের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, 'সরকারের শূন্যপদ পূরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শূন্যপদসমূহ পূরণে সুনির্দিষ্ট বিধি মোতাবেক পদ পূরণের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে নবম (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ থেকে ১২ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে।'
মন্ত্রী জানান, রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ এর রুল ২৫ (১) অনুযায়ী প্রণীত মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী সরকারের শূন্যপদ পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ অনুমোদন করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এটি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মন্ত্রণালয়-বিভাগসমূহে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।
শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩ অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে, শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২ অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার। এ ছাড়া দেশের যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ। শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশের মোট শ্রমশক্তির ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এটা সত্য, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। সে কারণেই প্রচুর লোক প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি জমায়। কাজের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া এই শ্রমিকদের অনেকে দক্ষ, অনেকে অদক্ষ। অনেকে আবার তেমন লেখাপড়া জানেন না। প্রতারক চক্র এই অদক্ষতা ও শিক্ষাগত দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এই সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে বিদেশগামী শ্রমিকদের সঙ্গে। নানা ছুতোয় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার ঘটনা তো অহরহই ঘটে। পাশাপাশি এক কাজের কথা বলে শ্রমিকদের অন্য কাজ দেওয়া হয়। যে সুযোগ-সুবিধা ও বেতনের কথা বলা হয় বা চুক্তি হয়, সেখানেও প্রতারণার শিকার হতে হয় শ্রমিকদের। দেশের অর্থনীতিকে সচল ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে যেসব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এর মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অন্যতম। কেবল বিদেশে শ্রমবাজার শক্তিশালী করলেই বেকারত্ব দূর হবে না, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমের বাজারকে আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।