রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো ওইসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। গত দুই বছরে নানা অজুহাতে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবার শুরু হয়েছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। এর মধ্যে ২০২২ সালে দুই দফায় প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধসহ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত বছরের মে মাসে দেশের শীর্ষস্থানীয় ছয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। আরও বড় অঙ্কে ওষুধের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে ওষুধের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কারণ হিসেবে দায়ী করছে ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ওষুধের বাজারে প্রায় ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের ২৫ হাজার, ৩০ হাজার প্রোডাক্ট চালু আছে। এর মধ্যে ১১৭টি জেনেরিকের ৪৬০টি ওষুধের দাম ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। অন্যগুলো কোম্পানি খরচ হিসাব করে একটি দাম প্রস্তাব করে। আমরা ভ্যাট সংযোজন করে দাম সমন্বয় করে দেই। ওষুধ শিল্প সমিতির দাম বাড়ানোর প্রাথমিক আলোচনা শুনেছি। কিন্তু তারা এখনো আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো আবেদন করেনি। তারা আবেদন করলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ভোক্তা এবং প্রতিষ্ঠান সবার স্বার্থ বিবেচনা করে নিয়মানুযায়ী যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে। ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকই খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে। আর এ টাকার ৯৩ ভাগ যাচ্ছে রোগীর পকেট থেকে। ওষুধের পেছনে বছরে গড় খরচ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ছয় ভাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানি কারক দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার। দেশে এখন ২৫৭টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ১৫০টি সক্রিয়ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং আবারও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এটা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বাজার তদারকির কেউ নেই। আমরা মনে করি নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।

গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে এভাবে অযৌক্তিক ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে