কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এর আগে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার- এমনটিও জানা গিয়েছিল। হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে যৌন হয়রানি, গণধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং চাঁদাবাজি-দখলবাজিসহ ভয়ংকর নানা অপরাধ অহরহ সংঘটিত হয়েছে- যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মোটর সাইকেল মহড়া থেকে চার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। যার একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, এ নিয়ে এক দিনের ব্যবধানে ৩ বাড়িতে গুলির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে সৌদিপ্রবাসী মাহবুব আলমের ফ্ল্যাটে জানালার কাচ ছিদ্র হয়। গুলি লেগে একই এলাকার কলেজশিক্ষকের ভাড়াবাসায় জানালার কাচ ছিদ্র হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যখন এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষে গ্রহণ জরুরি।
প্রসঙ্গত, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে গুলি ছোড়ার আলামত ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেও কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
বলা দরকার, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে- কিশোর গ্যাং কতটা ভয়াবহ এ সংক্রান্ত উদ্বেগ উঠে এসেছে। ফলে এবারের ঘটনা আমলে নিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত ও বিশ্লেষণপূর্বক উদ্যোগ গ্রহণ করা। এছাড়া মনে রাখা দরকার, শিশু-কিশোররা যদি বিপথে চলে যায়, নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা পুরো দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগের হয়ে দেখা দেবে- সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, শুধু এবারের ঘটনাই নয়, হরহামেশাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে গ্যাং কালচার- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। কিশোর অপরাধীরা ঘটিয়ে চলছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ হত্যাকান্ডের মতো অপরাধ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেম নিয়ে বিরোধ, মাদকদ্রব্যসহ নানা অপরাধে অনেক কিশোর-তরুণ নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য শুরুর দিকে কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জে পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো- এমনটিও জানা যাচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকগুলো প্রভাবক জড়িত থাকার কারণে 'গ্যাং কালচার'-এর নিয়ন্ত্রণ আনতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন কর্তৃপক্ষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নানাভাবে এর সুযোগ নিচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। এছাড়া কোমলমতি কিশোরকে ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলছে 'গ্যাং'য়ের পৃষ্ঠপোষকরা- যা ভয়ানক বিষয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমলে নেওয়া দরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলছেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তবে শুধু পুলিশি তৎপরতায় এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। লক্ষণীয়, একাধিক সংস্থার তালিকায় দেখা গেছে, সারাদেশে অন্তত ৫ শতাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে এলিট ফোর্সর্ যাবের তালিকায় রাখা হয়েছে ৮২টি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তালিকা অনুযায়ী, রাজধানীতে ৫২টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগের অধীন ৩৫ থানা এলাকায় এসব চক্রের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬৯২। ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তরা এলাকায় ছয়টি চক্রে ৬৪ জনের মতো সদস্য রয়েছে।
আমরা বলতে চাই, কিশোর গ্যাংয়ের সামগ্রিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তার ভয়াবহতা হবে আরো ব্যাপক এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।