দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নিতে সচিবদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এই নির্দেশ দেন তিনি। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক নির্ধারিত কোনো আলোচ্য বিষয় থাকে না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ১৫ থেকে ১৬ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে ১১ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন। তার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নেওয়াসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী 'জিরো টলারেন্সের' কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) না। দুর্নীতি নিরসন ও প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরও। তাই যেখানে যেখানে 'সার্ভিস পয়েন্ট' আছে, সেখানে নজরদারি বা ভিন্নতর কৌশল অবলম্বন করে যে প্রক্রিয়া নেওয়া দরকার, তা নিয়ে দুর্নীতি দমনকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি ঘটেছে। ১২তম স্থান থেকে ১০তম স্থানে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। গত এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবারই সবচেয়ে বেশি। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন (সিপিআই)-২০২৩ বিশ্বজুড়ে একই সময়ে প্রকাশিত হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে 'বিব্রতকর ও হতাশাজনক চিত্র' মন্তব্য করা হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, যে মেয়াদের (নভেম্বর-২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩) তথ্যের ওপর নির্ভর করে এই রিপোর্ট হয়েছে। সে সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অবস্থান ও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণাসহ অন্য যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো প্রতিপালন বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারি খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ এক সময় দুর্নীতির জন্য পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দুর্নীতির সেই কলঙ্ক-তিলক মোচন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এটা যেমন সত্য, একইভাবে সত্য যে, আমরা সমাজ-রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পারিনি। যার কারণে আমাদের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা এখন দুর্নীতি। দেশের সবাই যদি অবৈধভাবে কোটিপতি হতে চায় তা হলে এটা রাষ্ট্রের জন্য একটা বিপজ্জনক বার্তা। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নিজস্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের তালিকা আরও অনেক বেশি দীর্ঘ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যদিও সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে- এটা স্বীকার করতেই হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারা এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশালী ও গর্বিত দেশ।