সীমান্তে উত্তেজনা-গোলাগুলি উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। তথ্য মতে, সোমবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে ওই ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের উপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে।
আমরা বলতে চাই, যখন এরকম ঘটনা ঘটছে, তখন তা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ক্ষেতের কাজের ফাঁকে রোহিঙ্গা শ্রমিকসহ দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন হুসনে আরা। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মর্টার শেল বিস্ফোরণ হলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে রোহিঙ্গা শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে সোমবার দিবাগত রাত ৮টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০৬ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, ঘুমধুম সীমান্তের অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে মিয়ানমারের ৪০০ চাকমা। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাও সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন।
এ কথা বলা দরকার, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩শ'র বেশি সামরিক চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে চলা ওই সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণাও করেছিল প্রশাসন।
সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, মিয়ানমারের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। রোববার রাত থেকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ঢেঁকিবনিয়া থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে এমনটিও খবরে এসেছে। সেখানে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হামলা চালালে লড়াই শুরু হয় বলে জানা গেছে। লড়াইয়ে উভয় পক্ষ মর্টার শেল, রকেট লঞ্চার, মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে।
আমরা মনে করি, সৃষ্ট পিরিস্থিতি যেমন এড়ানো যাবে না। তেমনিভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টার বিষয়টি আমলে নিতে হবে। জানা গেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির চাকমা সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ জন। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাও সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন। যদিও সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে কোনো রোহিঙ্গা অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকেও এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।