রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিল্প খাতে বেকারত্ব বাড়ছে

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শিল্প খাতে বেকারত্ব বাড়ছে

জনসংখ্যাবহুল দেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো কারণেই হোক বেকারত্ব বাড়লে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গ্যাস ও বিদু্যৎ সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে! অন্যদিকে লক্ষণীয়, এর সঙ্গে 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলার সংকট এবং অস্থিতিশীল আর্থিক পরিস্থিতি। জানা যাচ্ছে, নানামুখী চাপ সামলাতে না পেরে মালিকরা বেশ কিছু গার্মেন্টস গুটিয়ে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ গোপনে ধাপে ধাপে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চেষ্টা করছেন। এছাড়া নিয়মিত বেতন-ভাতা না পেয়ে কোথাও কোথাও শ্রমিকরাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়ছেন। ফলে যেটি আলোচনায় আসছে যে, এমন পরিস্থিতিতে শিল্প খাতে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের ওপর সরকারি নগদ প্রণোদনা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এর নেতিবাচক প্রভাবও শ্রমিকদের ওপর পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

আমরা বলতে চাই, সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা। লক্ষণীয় যে, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার। রাজনৈতিক কারণে ওইসব বাজার ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আবার এরই মধ্যেই গ্যাস ও বিদু্যতের ঘাটতি গোটা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় অঞ্চল চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সাভার এলাকার শিল্প কারখানার চালচ্চিত্রে যা এখনই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে বলেও জানা যাচ্ছে।

ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শিল্প খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার প্রভাব কতটা উৎকণ্ঠার বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার ধরে রাখা নিয়ে যে শঙ্কার বিষয় আলোচনায় আসছে সেটিও আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, সৃষ্ট সংকটজনক পরিস্থিতিতে যখন নীরবে শিল্প খাতে বেকারত্ব বাড়ছে, তখন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের সেটি অনুধাবন করা জরুরি। বিপুল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। তাই যে কোনো পরিস্থিতি বা কারণেই বেকারত্ব বাড়লে কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

উলেস্নখ্য যে. গার্মেন্টস শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মন্দায় ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানি কমেছে। দেশে গ্যাস ও বিদু্যৎ সংকটের কারণে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। এছাড়া নানান ঘটনাসহ জানা যাচ্ছে, সিংহভাগ পোশাক কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। নতুন কারখানা চালু করা দূরে থাক বিদ্যমান কারখানাও পুরো দমে চালু রাখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছু কারখানা গুটি কয়েক ইউনিট চালু রেখে কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। উলেস্নখ করা দরকার, যখন পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাসে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। তখন এটি অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক। বৈশ্বিক মন্দায় পোশাক রপ্তানি কেবলিই কমছে। এতে চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে উৎপাদন ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। অনেক কারখানার একাধিক ইউনিট বন্ধ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। গ্যাস ও বিদু্যৎ সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ কমে যাওয়া, অন্যদিকে ডলার সংকট এবং অস্থিতিশীল আর্থিক পরিস্থিতি। আর সার্বিকভাবে বাড়ছে শিল্প খাতে বেকারত্ব- ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি। বেকারত্বর মতো অভিশাপ থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে। অন্যেিদক, দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে শিল্প খাতের স্বাভাবিকতা কতটা জরুরি বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, এই খাতের সংকট যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এই খাতে বাড়ছে বেকারত্ব- এটাও এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে