ষড়ঋতুর আমাদের এই বাংলায় হেমন্তের পরেই প্রকৃতিতে চলে আসে শীতের আমেজ। শীতপ্রেমী মানুষের অপেক্ষার অবসান ঘটে। শীত উদযাপনে তাদের থাকে নানান পরিকল্পনা। শীতে অনেকেই চলে যায় পরিবার নিয়ে অবকাশ যাপনে দূরে কোথাও। চারিধারে পিঠাপুলির উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করা মানুষগুলোর জন্য শীত এক আতঙ্কের নাম। উত্তরবঙ্গে প্রতিনিয়ত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ হচ্ছে তীব্র শীতে। রাস্তার ধারে রাত যাপন করা এক ব্যক্তির কাছে শীতের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, 'বাবা! এই শীতকালটা আমাদের মতো অসহায় মানুষের উদযাপন করার ঋতু না। শীতকাল আমাদের জন্য অভিশাপ।' রাস্তায় রেলস্টেশনে পলিথিন মুড়িয়ে রাত কাটানো এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে শীত যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। রেল স্টেশনে রাত যাপন করা এক ব্যক্তি জানায়, 'গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরম আমরা মানিয়ে নিতে পারি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কোনো খাতার মোটা কভার অথবা ২০ টাকা দিয়ে কোনো তাল পাখা কিনে। কিন্তু শীতে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না তীব্র ঠান্ডায়। কোনো ব্যক্তি যদিওবা কম্বল নিয়ে আসে দেওয়ার জন্য তবুও সামনে একটি ক্যামেরা ধরিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে'। এ যেন সাহায্যের নামে হয়রানি। মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে আজ আমরা নামমাত্র শিক্ষিত। অসহায় মানুষগুলোকে পুঁজি করে লোক দেখানো সেবার মাধ্যমে, ফেসবুকে ভিউ বাড়ানোর ব্যবসা করে অধিক অর্থ উপার্জন করাটাকে আমরা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেকেই। তরুণ প্রজন্মের উচিত, মানবিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব থেকে নিঃস্বার্থভাবে রাস্তায়, রেলস্টেশনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এসব ছিন্নমূল মানুষগুলোসহ সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশীলদেরও সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।