শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাড়ছে বিদেশ যাত্রা, কমছে রেমিট্যান্স কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাড়ছে বিদেশ যাত্রা, কমছে রেমিট্যান্স কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে বিদেশ যাত্রা, কমছে রেমিট্যান্স। এ প্রবণতা দেশের জন্য শুভকর নয়। ১৪ বছরে দেশে জনশক্তি রপ্তানি অনেক বেড়েছে এবং বিদেশে পাড়ি জমাতে খরচও দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সে অনুপাতে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি কম। অভিবাসনে রেকর্ড অথচ রেমিট্যান্সে ধীরগতি। এ প্রবণতা সুখকর নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা গত এক বছরে ১৩ শতাংশ বেড়েছে- যা দেশের জন্য একটি মাইলফলক। তবে সে তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। পাশাপাশি ১৭৬টি দেশে কর্মী যাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ছয়টি দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী গেছেন। রামরুর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে মাত্র ২.৮৮ শতাংশ রেমিট্যান্সের হার বেড়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের সময় অভিবাসন গতির সঙ্গে রেমিট্যান্সের হার বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ হিসেবে রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা আমাদের একটি গবেষণায় দেখেছি, গত বছর কাজ না পেয়ে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ১২ শতাংশের মতো কর্মী ফেরত এসেছেন। তাহলে যে কর্মী ফেরত আসছেন বা সেখানে কোনো ধরনের কাজ পাচ্ছেন না, তিনি তো কোনো টাকা পাঠাতেও পারবেন না। ফলে যারা যাচ্ছেন তারাই যে টাকা পাঠাতে পারছেন, এটা সত্য নয়। এছাড়া, কর্মীরা বৈধভাবে পাঠানোর চেয়ে হুন্ডিতে সহজে পাঠাতে পারেন। ফলে এই জায়গাগুলো বন্ধ করা না গেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

বিগত এক বছরে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়া নারী কর্মীর হার কমেছে ২৭.৪৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী বিদেশ গেছেন, যেখানে ২০২২ সালে বিদেশ যাওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নারী অভিবাসনের হার কমেছে ৩.৪৪ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট রামরুর হিসাবে ১৯ শতাংশ প্রবাসী কর্মহীন থাকেন। আর ৩১ শতাংশ প্রবাসী প্রবাস জীবনে প্রতারণার শিকার হন। যার ১৫ শতাংশ যদি সঠিকভাবে নিজেদের কর্মদক্ষতা কাজে লাগাতে পারতেন- তবে দেশের রিজার্ভ ধরে রাখার রেমিট্যান্সের চাকা আরও গতি পেত। অনেকের ধারণা, দেশের বাইরে বেশি লোক পাঠানোর পরিবর্তে কমসংখ্যক দক্ষ লোক পাঠালেও ভালো রেমিট্যান্স দেশে আসত। তবে বিএমইটি বলছে, কাজের নিশ্চয়তা দিয়ে নিরাপদ যাত্রা ও দক্ষ জনবল লক্ষ্য হলেও হোঁচট খাচ্ছে সচেতনতায়। শ্রমিকরা এখনো মাইগ্রেনবান্ধব সেবা পাচ্ছেন না। সেবা পেলে তাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হতো। এছাড়া হুন্ডির খরচ কমিয়ে তারা কীভাবে বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে, সে বিষয়ে তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।

প্রশ্ন উঠেছে রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমছে কেন। প্রবাসী আয় কোথায় যাচ্ছে? বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলারের রেটসহ প্রচলিত কারণের বাইরে এই সময়ে নির্বাচনের আগে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমছে। যারা অর্থপাচার করছেন তারা সংঘবদ্ধ হুন্ডি চক্রের মাধ্যমে প্রবাসী আয় বেশি রেট দিয়ে প্রবাসেই নিয়ে নিচ্ছেন। সামনে তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমার আশঙ্কা করছেন তারা। এর ফলে, রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। রেমিট্যান্স যদি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের টার্গেট করা না যায় তাহলে রিজার্ভের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আইএমএফ কমপক্ষে ২৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে। আমরা এখনো সেটা পারিনি। এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে