বিশ্ব ইজতেমা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনুক
প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর ইজতেমা হয়নি। এরপর গত বছর থেকে আবারও ইজতেমা হওয়ায় মুসলিস্নদের মুখে স্বস্তির হাসি। আজ থেকে প্রথম পর্বের কার্যক্রম শুরু হলেও, জানা গেছে, একদিন আগেই ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকেই অবস্থান নিয়েছেন সড়কের পাশে। তথ্য মতে, তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় বার্ষিক সম্মিলনের এ আয়োজন আগের বারের মতোই এবারো হবে দুই পর্বে। প্রথম পর্বে ইজতেমা ২ থেকে ৪ ফেব্রম্নয়ারি আর দ্বিতীয় পর্ব হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রম্নয়ারি। ৪ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। অন্যদিকে, ৯ ফেব্রম্নয়ারি আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আর প্রথম পর্বের মতো একইভাবে ১১ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের আনুষ্ঠানিকতা।
উলেস্নখ্য, বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ এই সম্মিলনের আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর বৃহস্পতিবারেই জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশের লাখো মুসলিমের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। এর মধ্যে ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এবার ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদের পূর্বপাশে নামাজের মিম্বর এবং উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশি মুসলিস্নদের কামরার পাশে বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের মিম্বর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং বয়ানের মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করেন। বয়ান মঞ্চ থেকে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে বলেও জানা যায়। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার জন্য প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মাঠটিতে বাঁশের খুঁটির উপর ছাউনির মধ্যে বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদু্যতিক বাতি। দেশীয় তাবলিগের অনুসারীদের জন্য জেলাওয়ারি আলাদা খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশি তাবলিগ অনুসারীদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সংবলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বলা দরকার, পবিত্র হজের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সমাবেশ এই বিশ্ব ইজতেমা। এ কারণে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বলে পরিচিত এটি। ইজতেমায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। দেশ-বিদেশের আলেমরা তাদের বয়ানে ইসলামের মর্মবাণী তথা মানবিক আদর্শ ও ভ্রাতৃত্ববোধের দিকগুলো তুলে ধরেন।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ উপলক্ষে ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব)। র?্যাবের ৫টি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে আকাশপথে র?্যাবের হেলিকপ্টার টহল, ডক স্কোয়াড টিম, ফুট পেট্রোলিং, মোবাইল টিম, টহল টিম, সাইবার মনিটরিংসহ ৭ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে এবার বিশ্ব ইজতেমায়। সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশির্ যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই জানিয়ের্ যাব মহাপরিচালক বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার করা হয়েছে। ইজতেমা স্থলসহ আশপাশের এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতেও পর্যাপ্ত সংখ্যকর্ যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানা যায়। এছাড়া ইজতেমা এলাকায় কন্ট্রোল রুম স্থাপনের পাশাপাশি সদর দপ্তরে 'সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম' থেকেও সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করা, মূল সড়কের কাছে তাঁবু না খাঁটানো এবং কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ফলে, মুসলিস্নরা এই নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলবে এমনটি কাম্য। বিশ্ব ইজতেমা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনুক। মানুষের ভেতর থেকে হিংসা-হানাহানি দূর করে পৃথিবীতে শান্তির অমিয়ধারা প্রবাহিত করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।