দ্বাদশ সংসদের যাত্রা শুরু সুশাসন নিশ্চিত হোক
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে মঙ্গলবার প্রথম অধিবেশন শুরুর মধ্য দিয়ে যাত্রা করল বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ভাষণ দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে 'গণতন্ত্রের জয় হয়েছে' মন্তব্য করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে 'সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ' পরিহার করে গঠনমূলক কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হওয়া, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আরও উন্নতি করা, ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার বিষয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন।
তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক কুকুর সভাপতিত্বে দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। উলেস্নখ্য যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত ১৫ জানুয়ারি এই অধিবেশন আহ্বান করেন। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারে। সংসদে এবার বিরোধী দলের আসনে আছেন মাত্র ১১ জন এমপি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের ২২৩ ও স্বতন্ত্র ৬২ জন এমপি আছেন। স্বতন্ত্র এমপিদের ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। জানা যায়, অধিবেশনের শুরুতে প্রথমে স্পিকার ও পরে ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার পদে এডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন। নতুন সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দেশ-বিদেশি কূটনীতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়স্বজনসহ ৫ শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনকে ঘিরে পুরো সংসদ ভবন নবীন-প্রবীণ সংসদ সদস্যদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। উদ্বোধনী অধিবেশন দেখতে ভিআইপি গ্যালারিসহ দর্শনার্থী গ্যালারিও ছিল পরিপূর্ণ।
২০১৯ সালে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। আইন অনুযায়ী এ সংসদের মেয়াদ শেষ ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। একাদশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই দ্বাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হলো। এটাও উলেস্নখ্য যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যদিও বড় দল বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই এ সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করছেন স্পিকার। এছাড়া গত দু'বারের মতো এবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসছে জাতীয় পার্টি। তবে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পরিবর্তে এবারে চেয়ারে বসছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
আমরা বলতে চাই, একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হবে। এটাও লক্ষণীয় যে, দ্বাদশ সংসদে শক্ত বিরোধী দল নেই- এমন আলোচনা উঠে এসেছে। অন্যদিকে, সংসদ সদস্যদের সংখ্যার বিচারে বর্তমান সংসদে ভারসাম্য রক্ষা হয়নি- এমন মন্তব্য করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আসন সংখ্যার বিচারে এবার সংসদে শতকরা ৭৫ ভাগই সরকারি দলের। স্বতন্ত্র ২১ ভাগ। তারাও প্রায় সরকার দলীয়। ৩-৪ ভাগ শুধু বিরোধীদলীয় সদস্য। তিনি বলেন, 'এ সংসদে সম্পূর্ণ জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এ সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না।' আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এটাও বলা দরকার যে, দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটা মনে হওয়া অযৌক্তিক নয় যে, সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশের উন্নয়ন এবং সুশাসন কায়েমে সরকার সফল হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দ্বাদশ সংসদ দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখবে- এমনটিই প্রত্যাশা।