সীমান্তে আতঙ্ক

সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনো ধরনের ঘটনায় সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি মিয়ানমারের সীমান্তচৌকি এলাকায় সোমবার সকাল ১০টার দিকে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর গোলাগুলির প্রচন্ড শব্দে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রম্ন, বাইশফাঁড়ি এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটিও দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রম্ন ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) দুটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। অন্যদিকে, তুমব্রম্ন সীমান্তের অপর পাশে ঢেঁকিবুনিয়া ও বাইশফাঁড়ির বিপরীতে তুমব্রম্ন রাইট ক্যাম্প। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ দুটি এলাকায় সোমবার সকাল ১০টার দিকে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় মর্টার শেলের আওয়াজও শোনা যায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের লোকজন। বিজিপির ঢেঁকিবুনিয়া সীমান্তচৌকিতে গোলাগুলির সময় বিস্ফোরিত মর্টার শেলের অংশ শূন্যরেখায় এসে পড়ে। গত শনিবারও ওই দুই সীমান্তচৌকি এলাকায় গোলাগুলি হয়েছিল। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কেননা, জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য উত্তপ্ত। সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। কিন্তু এটা এড়ানোর সুযোগ নেই যে. রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ- যা ইতিবাচক। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে আর এটাও জরুরি। কিন্তু একইসঙ্গে পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সতর্কতা ও কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার যে, সাধারণভাবে মনে করা হয়, রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগও নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে সীমান্তে সব ধরনের সতর্কতা প্রয়োজনে বাড়াতে হবে। আমরা বলতে চাই, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এ সংঘর্ষের রেশ এসে পড়েছে। এটাও জানা গেছে যে, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভারী মর্টার ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। বিজিবি সূত্র বলছে, শনিবার বিকালে মিয়ানমার থেকে ১৩ মর্টার শেল ও ১ রাউন্ড বুলেট বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে এসে পড়েছে। এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে বিজিপির কাছে লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ফলে সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন- যা আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্প্রতি সশস্ত্র আরাকান আর্মি হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীর অনেক চৌকিই দখলে নিয়েছিল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এতদিন এসব হামলায় বলতে গেলে তেমন কোনো বাধাই দেয়নি। কিন্তু জান্তার ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ফলে এই পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকে এড়ানো যাবে না। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক বাংলাদেশে রোহিঙ্গা যেন আবার প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।