বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩
জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় একটি মাইলফলক
প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ডা. মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের কাছে ২০২৩ অত্যন্ত আনন্দের বছর ছিল। স্বাধীনতার পর এই প্রথম মহান জাতীয় সংসদে বিগত সরকারের সর্বশেষ সংসদীয় অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩ পাস হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ইং তারিখে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমেন তোমাকে জানাই লাল সালাম। তুমি অমর হয়ে থাকবে পৃথিবীর সর্বশেষ দিন পর্যন্ত। আইনটি বাস্তবায়নে সাহসী পদক্ষেপ এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনন্দিত মানবতার ফেরিওয়ালা শেখ হাসিনা আপনাকে অবহেলিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সমাজের পক্ষ থেকে লাখো কোটি সালাম। আপনি প্রতিজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের প্রতিটি রক্তের ফোঁটায় মিশে থাকবেন সারা জীবন। মৃতু্যর পরেও আপনি এবং আপনার পর্ষদরা অমর হয়ে থাকবে এ পেশার চিকিৎসকদের কাছে। তাইতো আপনার সরকার হোমিওবান্ধব সরকার। একটু ফিরে তাকাই (১৯৭২-২০২৩)। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নে আপনি এবং আপনার পিতার অবদানের কথা স্মরণ করে দিতে চাই এ অকৃতজ্ঞ সমাজকে। স্বাধীনতার পর থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অবদান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড গঠন করেছিলেন, তিনি একই সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ১৪ লাখো টাকা অনুদান দিয়ে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের শুভ সূচনা করেছিলেন, বর্তমানে যা শত কোটি টাকার সমান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এক কোটি টাকা অনুদান দিয়ে পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। যা বর্তমানে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিলে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৭ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা পরিদপ্তর এবং পরবর্তী সময়ে আলাদাভাবে বিকল্প চিকিৎসা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি প্রতি বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঐঘচঝচ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালে হোমিও ও দেশজ চিকিৎসকদের নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন, এ পর্যন্ত অনেকেই রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বাকিরাও একই ধারাবাহিকতায় সরকারিকরণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবেন বলেই আশা করি, তার সময়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার সরকারের সহযোগিতায় ছয়টি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত আছে, স্বল্প পরিসরে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে, মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩, যা অত্যন্ত যুগান্তকারী, বাস্তবসম্মত এবং যোগ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালনে সক্ষম। তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে তা পাস হয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য সরকারের আমলে যেমন ১৯৮০ সালে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২য় পাঁচশালা পরিকল্পনায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সৃষ্টিসহ চার বিভাগে চারটি হোমিওপ্যাথিক ডিপেস্নামা কলেজকে সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরহুম এরশাদের সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নয়ন না হলেও বিগত সরকার কর্তৃক পাসকৃত চার বিভাগে চারটি ডিপেস্নামা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ সরকারিকরণের প্রস্তাব বাতিল করেছিলেন। তবে তিনি রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে সরকারিভাবে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৮৩ সালে হোমিওপ্যাথিক ওষুধকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে হোমিওপ্যাথিক সমাজের কাছে অমর হয়ে আছেন। বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির শিক্ষা ও চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা- সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ৬৬টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ (ডিপেস্নামা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি- ডিএইচএমএস) কোর্স আছে। যেখানে এসএসসি ও সমমানের যে কোনো বিভাগে অধ্যয়ন করে যে কোনো বয়সি ব্যক্তিরা ডাক্তার হওয়ার সুযোগ রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে- যেখানে এমবিবিএস-এর সমমানের বিএইচএমএস (ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এমবিবিএস-এর ন্যায় কোর্সটির ভর্তি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিটি জেলা শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা সরকারিভাবে কর্মরত রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা কর্মরত রয়েছেন, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষক ও চিকিৎসক হিসেবে অনেকেই কর্মরত আছেন, দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে এমবিবিএসদের পাশাপাশি সরকারি চিকিৎসক হিসেবে অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কর্মরত, বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষক ও চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত, বিভিন্ন দাতব্য চিকিৎসালয়ে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন, একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে পরিচালিত যেখানে অনেক শিক্ষক ও চিকিৎসক কর্মরত।
বর্তমানে হোমিওপ্যাথি তথা বিকল্প চিকিৎসা, শিক্ষা, ও ওষুধ শিল্প, নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৬টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সদ্য বিলুপ্ত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড- যা বর্তমানে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে হোমিও, দেশজ ও বিকল্প চিকিৎসা পরিদপ্তর রয়েছে; দুঃখজনক হলেও সত্য ওই সমস্ত জায়গায় সর্বোচ্চ পদসমূহে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো চিকিৎসক নেই, সেখানে আছেন এমবিবিএস চিকিৎসকরা। এ প্রবন্ধকার কর্তৃক দায়েরকৃত সিভিল আপিল মামলা নম্বর ১২/২০১০ (যা রিট-২৯১৯/ ২০০৬-এর ধারাবাহিকতা) ও (উখজ ৬৬-২০১৪) ইতোমধ্যে ওই মামলার আদেশের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ১১ জন চিকিৎসক প্রভাষক হিসেবে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগ লাভ করেছেন। এ আপিল বিভাগ হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা ও চিকিৎসা পেশায় অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, অথচ অদ্য পর্যন্ত সরকার নিজেই আদালতের নির্দেশনা না মেনেই আদালত অবমাননা করে যাচ্ছেন, বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পের বিশাল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারিভাবে ওই বিকল্প ওষুধ পরীক্ষা, নিরীক্ষা, ওষুধ প্রস্তুতকরণ কর্মপরিকল্পনা, আমদানি, রপ্তানি ওষুধের গুণগত মান যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রতিটি ধাপে পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবল নেই, ফলে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তায়ন এমন কতিপয় অসাধু সরকারি কর্মকর্তার ইন্দনে অসাধু চিকিৎসক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীরা চিকিৎসা ও ওষুধের নামে প্রতারণা করে আসছে- যা জনসাধারণের স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি স্বরূপ। বিগত দিনে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের নামে রেকটিফাইড স্প্রিট সেবনে বহু নিরীহ মানুষ মৃতু্যবরণ করেছে- যা সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যার দায় কোনোক্রমেই বিগত সরকার এড়াতে পারেননি। এ ব্যাপারে এখনই বর্তমান সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। বর্তমানেও এটি অত্যন্ত ভীতিকর পর্যায়ে রয়েছে। এ সমস্ত তথাকথিত চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড হওয়া উচিত মর্মে বিধি প্রণয়ন করা আবশ্যক।
আমরা আশা করি, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং একনিষ্ঠ সৎ এবং সম্মানিত ব্যক্তির সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠিত হবে।
\হসুতরাং, ওই নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান সরকারের উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নূ্যনতম অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হতে পারে। মহান জাতীয় সংসদে সদ্যপাসকৃত আইনটির সার্থক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্ব আশা এবং অপরের মেধা শক্তিকে কাজে লাগানো একান্ত আবশ্যক। যারা বিভাগীয় সদস্য তারা যেন সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ওই বিভাগের চিকিৎসক ও শিক্ষকদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসেন। (আইনের উদ্দেশ্য বিভাগীয় প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম, ওষুধ ব্যবসা কার্যক্রম মনিটরিং ও দেখাশোনা করা। স্বাস্থ্যসেবায় জনসাধারণের জীবন নিয়ে কোনো প্রকার অন্যায় অনিয়ম হলে তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেবেন। এ ক্ষেত্রে বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বিভাগীয় সদস্যদের কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা অর্পণ করা যেতে পারে।) এ ব্যাপারে সদস্য / মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য পূর্বের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চিকিৎসক ও শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করা যেতে পারে। সরকার মনে করলে বিভাগীয় কমিশনাররা শিক্ষক, চিকিৎসক ও মহিলা চিকিৎসক নির্বাচন করে নাম পাঠাতে পারেন, তবে শর্ত থাকতে হবে প্রতিনিধিদের চিকিৎসা কার্যক্রম ওই নির্দিষ্ট এবং ওই বিভাগের স্থায়ী বসবাস করেন তার প্রমাণ থাকতে হবে, বিগত দিনে বিভাগের প্রতিনিধি অথচ তারা সবাই স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। ঢাকায় চাকরি, ব্যবসা ও ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় এবং রোগী দেখাশোনা করেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বাংলাদেশসহ বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের কাছে অতি পরিচিত চিকিৎসক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন যিনি আগুনে পোড়া রোগার্ত মানুষের অহংকার যিনি সব বাধা উপেক্ষা করে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ১৯৮৬ সালে পাঁচ শয্যার বার্ন হাসপাতালের কার্যক্রম আরম্ভ করে বর্তমানে পাঁচশত শয্যায় উন্নীত করে বিশ্ব নন্দিত, অবহেলিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বার্ন হাসপাতাল তৈরি করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন- তাকে আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে আরও একবার পরিচয় করাতে 'মা' আপনাকে গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ অভাগা জাতির কল্যাণে আপনার মতো সফল রাষ্ট্রনায়ক মহীয়সী নারীকে দীর্ঘ হায়াত দানের প্রত্যাশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান/দেশীয় চিকিৎসার উন্নয়নে সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ পুনরায় উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশের (৩০-৪০)% অসুস্থ্য মানুষের চিকিৎসাসেবা, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন, কার্যকরী ওষুধ শিল্প বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি হোমিওপ্যাথিক পেশাকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য বিগত দিনের বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩ অনুসারে নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব (যিনি প্রশাসনিকভাবে দক্ষতাসম্পন্ন, অভিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত এবং মানসম্মত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক) নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক এবং একই প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাচাই করে পরিষদের অন্য সদস্যদেরও মনোনয়ন/নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, ৫৩৫/২০১৯নং রিট মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতিদের সুপারিশ অনুসারে ভারতীয় মডেল ( মিনিস্ট্রি অব আয়ুশ গভর্মেন্ট অব ইন্ডিয়া) বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা আবশ্যক। আমার দায়েরকৃত সিভিল আপিল মামলা নম্বর ১২/২০১০ (যা রীট-২০১৯/২০০৬ এর ধারাবাহিকতা) উখজ-৬৬-২০১৪ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা পরিদপ্তর, বিকল্প চিকিৎসা পরিদপ্তর, সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বেসরকারি বিভিন্ন হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যতীত অন্য প্যাথির চিকিৎসকদের নিয়োগ/ বদলি /প্রেষণে/প্রজেক্টে নিয়োগ না দেওয়া আবশ্যক। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী প্রস্তুত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আমদানি-রপ্তানি এবং জেলা- উপজেলা পর্যায়ে তদারকি করার জন্য পৃথক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ পরিদপ্তর স্থাপন করা আবশ্যক। যে সমস্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাদের নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখেন এবং নিজস্ব রোগীদের নিজস্ব চেম্বার থেকে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ দিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ড্রাগ লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই মর্মে সরকারি আদেশ প্রদান করা আবশ্যক। দূরারোগ্যব্যাধির হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে একজন যোগ্য চিকিৎসক সৃষ্টি করা আবশ্যক। হোমিওপ্যাথিতে ডিএইচএমএস পাসকৃত চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের ন্যায় পর্যায়ক্রমে চলমান সব বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে চলমান ডিএইচএমএস কোর্স বিলুপ্ত করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিগ্রি (বিএইচএমএস) কোর্স অধ্যায়নে রূপান্তর করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে যে সমস্ত চিকিৎসক ডিপেস্নামা অর্জন করেছেন তাদের কনডেন্স/শর্ট কোর্সের মাধ্যমে (বিএইচএমএস) কোর্সে অধ্যায়নের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। দেশরক্ষাকারী সব বাহিনীর স্বাস্থ্য সেবায় চাকরি প্রদানের সুবিধাসহ বিসিএস (স্বাস্থ্য) সার্ভিসে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্তকরণ আবশ্যক। পূর্বের ন্যায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নিয়োগ এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হজ টিমে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের সম্পৃক্তকরণ বিষয়টি বিবেচনা করা আবশ্যক।
ডা. মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া : সহকারী অধ্যাপক (অব.) সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল