নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ। বাংলাদেশে মেহেরপুর জেলায় ২০০১ সালে প্রথম নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সে বছর মোট আক্রান্ত ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রাণ হারায়। এ যাবতকালে সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন রোগী পাওয়া যায় ২০০৪ সালে, তাদের মধ্যে ৫০ জনের মৃতু্য হয়েছে। আইইডিসিআরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩৩৯ জনের নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ২২৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। চলতি বছর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা গেছে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। একপর্যায়ে খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জ বাদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সবগুলো জেলায় পাওয়া গেছে এ ভাইরাস। আইইডিসিআরের হিসাবে, নিপাহ ভাইরাসে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা রাজশাহী ও রাজবাড়ী। ২০১৫ সালের পর প্রতি বছরই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ জনের কম ছিল। তবে গত বছর শীত মৌসুমে (জানুয়ারি-ফেব্রম্নয়ারি) ১৪ জন রোগী পাওয়া যায়। রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী ও নরসিংদীতে পাওয়া যায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার মান্তা ও ঘোস্তা গ্রামে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় একজন মারা গেছে।
নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে কোনোভাবেই খেজুরের রস কাঁচা পান করা যাবে না- এমনটি বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন। এমনকি অনেকে বলে থাকেন, রস গরম পান করলেও এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অন্যদিকে, এটাও লক্ষণীয়, প্রতি বছর শীত মৌসুম আসার আগে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে নিপাহ ভাইরাস রোধে জনসচেতনতা কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক। নিপাহ ভাইরাসের টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি, ফলে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অধিকতর তৎপরতা জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই।