আত্মহত্যা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আত্মহত্যা সংক্রান্ত যে চিত্র উঠে আসে সেগুলো অত্যন্ত পরিতাপের। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, গত বছর দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৬০ দশমিক ২ শতাংশ রয়েছেন নারী। শিক্ষার স্তর বিবেচনায় ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪৯ জন আত্মহত্যা করেন। আর এসব তথ্য উঠে এসেছে, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায়।
শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের আত্মহত্যার চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনটির রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার। জানানো হয়, ২০২৩ সালে ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী (৪৪.২০%) আত্মহত্যা করেন। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.২%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১%) এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৪%)। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ৪৩ জন করে, ময়মনসিংহে ৩৬ জন ও সিলেটে ১২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল- দেশে আত্মহত্যাজনিত অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্য বাড়ছে। আমরা বলতে চাই, আত্মহত্যা সংক্রান্ত চিত্র আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আত্মহত্যা যে জীবনের কোনো সমাধান নয়, এমন বিষয়কে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনো-চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা ও আর্থিক সংকটের ফলে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে বলেও এর আগে আলোচনা এসেছে। উলেস্নখ্য, আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষার যে তথ্য উঠে এসেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে- সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছাত্রছাত্রী বলি হয়েছেন 'অভিমানের ছুরিতে'। অন্যদিকে, আত্মহত্যা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তাদের মতে, অত্মহত্যার মতো ঘটনা রোধে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার তাগিদ দেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেন্টাল হেলথ কর্নার চালু করার বিষয়টিসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের কৌশল, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানোর বিষয়টি তুলে ধরে। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ইন্সু্যরেন্স বীমার আওতায় আনা, যেন তা সবার জন্য সাশ্রয়ী হয়।
আমরা বলতে চাই, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আর শিক্ষার্থী আত্মহত্যা সংক্রান্ত চিত্র পরিতাপের এবং উদ্বেগের। ফলে এবারে আত্মহত্যার যে তথ্য এলো তা আমলে নিতে হবে এবং আত্মহত্যার কারণগুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়ানো, বিশেষ করে মানসিক শক্তি বাড়ানোর বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়- এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, আত্মহত্যা সম্পন্ন হয়ে গেলে কিছুই আর করার থাকে না। ফলে প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ কার্যকর উদ্যোগ জারি রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা সংক্রান্ত যে তথ্য সামনে এলো তা আমলে নিতে হবে এবং এটি প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জীবন সুন্দর- এমন উপলব্ধি জাগ্রত করতে হবে। সংকট ও সমস্যা জীবনের অংশ, আর তা মোকাবিলা করতে দক্ষতা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা জরুরি- এই ধরনের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জীবন মূল্যবান, আর তা আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে এমনটি কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিষয় আমলে নেওয়া এবং গবেষণা সাপেক্ষে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।