বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতিটি ডিমের দাম ১২ থেকে ১৪ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। মাছ-মাংসে হাত দেওয়ার উপায় নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে 'আগুনে হাত পুড়ে' যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলতো, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। বাড়তি চাল-ডালের দামের কারণে ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ ভোক্তা। পুষ্টির চিন্তা কেউ মাথায় আনতে পারছেন না। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের সেবার দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
রাজধানীর নয়বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। বিভিন্ন অজুহাত ও ভোক্তাকে জিম্মি করে অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু যে বা যারা এসব দেখবে তারা এক প্রকার নির্বিকার। পরিস্থিতি এমন- ব্যয়ের সঙ্গে আয় না বাড়ায় আমাদের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই, পণ্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এছাড়া গত সাত দিনে ডিম ও পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশি রসুনের কেজি ৩০০ টাকা। দেখার যেন কেউ নেই।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি বলেন, প্রতি বছর পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে ক্রেতার আয় বাড়ছে না। আয় না বাড়ায় ক্রেতার বাড়তি দরে পণ্য কেনা এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্যকিছু কেনা বাদ দিয়েছেন।
ভারত থেকে অতি শিগগিরই ২০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ৫০ হাজার টন চিনি আমদানি করা হবে। এছাড়া আসন্ন রমজান মাসের আগে সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। দেখা যাক কী হয়।
বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশে এ হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর জন্য দায়ী এ দেশের অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বাজার তদারকির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রমজানের আগেই নতুন সরকারের সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।