রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র

কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া, পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। আর এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়েই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা আমলে নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আবারও এটি সামনে এসেছে যে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদক ও অস্ত্রের স্বর্গরাজ্য। মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদীন ও আল ইয়াকিনসহ অন্তত ৩০ সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত হয়ে বসবাস করছেন বলেও খবরে উঠে এসেছে। আরও জানা যাচ্ছে এসব সংগঠনের রয়েছে অন্তত ৫০ হাজার সন্ত্রাসী। যারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প এবং ক্যাম্প সংলগ্ন গহিন অরণ্যে গড়ে তুলেছে অবৈধ অস্ত্রের মজুত। তথ্য মতে, গত প্রায় সাড়ে ৬ বছরে ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে খুন হয়েছেন দুই শতাধিক। এসব ঘটনায় গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৯ শতাধিক দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ দুই হাজারের বেশি সন্ত্রাসী ও মাদক চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক। উলেস্নখ্য, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লালপাহাড়ের্ যাব-১৫-এর অভিযানে ২২টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ আরসার তিন সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। এক্ষেত্রে এটাও আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৫ কেজি বিস্ফোরক, ১৫টি ককটেল ও আইডি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেনর্ যাব-১৫ সদস্যরা। এ সময় গ্রেপ্তার হন আরসার কমান্ডারসহ তিন সদস্য। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। যখন অস্ত্র উদ্ধারসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটছে- তখন তা যেমন উদ্বেগের তেমনিভাবে কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে সেটাও এড়ানোর সুযোগ নেই। বলা দরকার, শুধু এবারের ঘটনাই নয়, এর আগেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে এবং এর আগে এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, এতে করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ফলে যত দ্রম্নত সম্ভব এবারের ঘটনাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে কীভাবে কী পরিমাণ মাদকের চোরাচালান বেড়েছে এর আগে এটিও আলোচনায় এসেছিল। যেখানে বলা হয়, মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এলাকাকে। এছাড়া নানা সময়ে রোহিঙ্গা এলাকায় ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফলে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে যে বাড়তি চাপ ও ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে- তা এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করতে গিয়ে এই চাপ নিতে হচ্ছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এটিও আলোচনায় এসেছিল যে, মিয়ানমারই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করেছে, আর তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি ছিল এর সমাধান করা। ফলে মিয়ানমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে এমনটি কাম্য। মনে রাখা দরকার, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবতে হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু-সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার ভোরে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত হোক- এমনটি কাম্য।