ইশতেহারের আলোকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের প্রত্যয়
দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধির মতো সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হীরেন পন্ডিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরবে, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করবে এবং তা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিয়েছেন, তা এক সময় ছিল অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। সেই তুলনায় এ এবারের ১১টি খাতকে চিহ্নিত করে পরিবর্তন আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেটি দেশবাসীকে নতুনভাবে আশান্তি করেছে।
বিশ্ব অর্থনীতি চারটি বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, জলবায়ু পরিবর্তন, যুবদের কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশ্বায়নের গ্রহণযোগ্য কাঠামোর অনুসন্ধান। আমাদের নতুন সৃজনশীল কার্যকর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে ভীতিকর অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে কার্বনমুক্ত করতে উদ্যোগ দরকার।
প্রত্যেক দেশ তার নিজস্ব এজেন্ডা গঠন করে এগিয়ে যাবে, তারা এমন নীতিগুলো বাস্তবায়ন করবে- যা তাদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার জন্য সর্বোত্তম জবাবদিহিতা। অসমতা, মধ্যবিত্তের টানাপড়েন এবং শ্রমবাজারের মেরুকরণ আমাদের সামাজিক পরিবেশেরও সমানভাবে অবনতি ঘটাচ্ছে। সামাজিক রূপান্তর ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সাহায্য করতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকদের জন্য ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের প্রয়োজন বেশি বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, এ ধরনের কর্মসংস্থান সরবরাহের ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় জোরালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। বিশ্বায়নকে একটি নতুন বোঝাপড়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে- যা জাতীয় চাহিদা এবং একটি সুস্থ বিশ্ব অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তাগুলোকে পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ করে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগকে সহজতর করা।
শেখ হাসিনা যে পরিবর্তন বাংলাদেশে ঘটাতে পেরেছেন তা এক সময় ছিল অকল্পনীয়। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা ছিল, সব মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ আনা হয়েছে। এতে আন্দাজ করা যায় এই মেয়াদে তিনি অর্থ, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি, সুশাসনকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে প্রকাশিত দলীয় ইশতেহারেও ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই মেয়াদে সরকার পরিবর্তন আনতে চাইছে, সেটি তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ইশতেহারে ১১টি জনগুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কথা উলেস্নখ করে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ রোধ করা এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তার মেধা ও অভিজ্ঞতাকে নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করে নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। অর্থনীতিকে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির প্রকোপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারা, টাকার হিসাবে ডলারের অব্যাহত দাম বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোয় হুন্ডি ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে সাধারণ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা, মারাত্মক ডলার সংকটের কারণে আমদানি এলসি খুলতে অপারগতা, কার্ব মার্কেটে হু হু করে ডলারের দাম বেড়ে ২০২১ সালের ৮৭ টাকা থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ১২৫ টাকায় উলস্নম্ফন।
বাংলাদেশি টাকার বৈদেশিক মানের প্রায় ২৮ শতাংশ অবচয়ন, আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে ব্যাপক পুঁজি পাচারের অভিযোগ, রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না এনে সেগুলো দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি ক্রয়, দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠন সম্পর্কে সরকারের অব্যাহত নিষ্ক্রিয়তা, দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে চার বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মারাত্মক ঘাটতি পরিস্থিতি, ব্যালান্স অব পেমেন্টসের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বহুদিন পর সৃষ্ট বিপজ্জনক ঘাটতি পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং পুরো মন্ত্রিসভার টিমওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন অর্থমন্ত্রীকে ওপরে উলিস্নখিত সমস্যাগুলো অবিলম্বে মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সবার আগে নজর দিচ্ছে ডলারের দাম বৃদ্ধি থামিয়ে দিয়ে টাকার ২৮ শতাংশ অবচয়নের ফলে উদ্ভূত মারাত্মক মূল্যস্ফীতি সমস্যার লাগাম টেনে ধরার জন্য। দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণের নানা ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ায় ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ১৬ মাসে এলসি খোলা ১৬ শতাংশ কমে এসেছে। কিন্তু হুন্ডি ব্যবস্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণকে কোনোমতেই নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসার রমরমা অবস্থা দিন দিন বাড়তে থাকার প্রধান কারণ।
দুর্নীতি এখনো বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল, কিন্তু গত পাঁচ বছরে সরকার এ অঙ্গীকার পূরণকে খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি ও ডলার-জ্বালানিসংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ নানামুখী সমস্যায় বৈশ্বিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থা পর্যুদস্ত। এ সংকট খুব শিগগিরই দূরীভূত হওয়ার নয়।
দেশের অর্থনীতিকে মোটামুটি সচল রাখা পোশাকশিল্পেও নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কতিপয় সুযোগসন্ধানী অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকান্ড চালানোর চেষ্টা করেছে। একের পর এক হরতাল-অবরোধে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় একসঙ্গে যতগুলো সংকট এসেছে, তা অতীতে কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি। সেটারই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। বাইরের এ ধরনের সংকট এলে আমরা ঠেকাতে পারব না। আমরা কোনো রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা চাই না, হরতাল-অবরোধ চাই না। এসব করে অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করা হয়েছে। কাজেই দেশের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থে সংকটগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দ্রম্নত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে তা না হলে রিজার্ভ-রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাই হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্রব্যমূল্য, মুদ্রার বিনিময় হার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ে কাজ করতে হবে। কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি দ্রম্নত বাস্তবায়ন করতে হবে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের ব্যাংক বা অন্য কোনো খাতে যেন কাঠামোগত সংকট দেখা না দেয় এবং বৈদেশিক দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সরকার আইএমএফ ও অন্য দাতাদের কাছ থেকে যেসব সংস্কারের শর্তে ঋণ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর সেগুলো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো ব্যাপারে শঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। বড় ধরনের কোনো সংস্কার ছাড়া অর্থনীতির সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কাজেই অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে হলে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ প্রয়োজন, তার ওপরই অর্থনীতির সংকট উত্তরণ নির্ভর করবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন।
আমাদের মানসম্মত ও কারিগরি শিক্ষার ওপর নজর দিতে হবে। শিক্ষা শেষ করে লাখ লাখ তরুণ দক্ষতার অভাবের কারণে চাকরি খুঁজে পায় না। দেশের অভ্যন্তরে যেমন শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, প্রবাসেও বাংলাদেশ থেকে দক্ষ প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জনসম্পদের চাহিদা রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনা, দক্ষ ও মেধাবী প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের কৃষিব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বহুমুখী ফসল উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণনব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োগ করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাজারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
সংকট দূর করে উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে অনুকূল পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও সহিষ্ণুতা না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। নানা ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সচল রাখতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুশাসন দরকার। যে কোনো সমস্যা সমাধানে যৌক্তিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতায় দলমতনির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে নিজের অবস্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার পাশাপাশি জনমত গঠন জরুরি। সব অপতৎপরতা প্রতিরোধ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দেশ গঠনে মনোযোগ দিতে হবে।
দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধির মতো সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। দ্রব্যমূল্য গত দুই বছর লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ছিল। সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য টিসিবিকে সক্রিয় করে এক বছর ন্যায্যমূল্যে কিছু পণ্য ক্রয় করার সুযোগ করে দিয়েছিল। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে। তবে সবাইকে এর আওতায় আনা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, ডলার-সংকট এবং একচেটিয়া কারবারিদের কারসাজিতে আমদানি করা পণ্যসামগ্রীর দাম বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন ছিল। তবে আমার কথা হলো নির্বাচনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেও তিনি দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করে বাজারে সিন্ডিকেট থাকবে না বলে শক্ত কথা বলেছেন। অথচ নির্বাচনের পর থেকেই বাজারে চালের দাম ভরা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী দুইভাবে বাজারে আসে প্রথমটি বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী। দেশের ব্যবসাবাণিজ্যকে নীতি-নৈতিকতা, আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার সংস্কৃতিতে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশকে শুধু তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল না থেকে শিল্পের বহুমুখীকরণের দিকে এখনই গুরুত্ব দিতে হবে এবং রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছেন। সেগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো, বিদেশি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা যায়, সে বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধির মতো সমাজ, প্রশাসনসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
আমাদের সমাজে দুর্নীতি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজে যোগ্য মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞরা ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাবাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, সেবা, পরিষেবায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে হবে।
হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক