তিন পণ্যের শুল্ক কমানোর উদ্যোগ ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা বাড়বে কি?

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোজা সামনে রেখে তিন পণ্যের শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এর আগের দিন রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাঁচ মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠক হয়। কোন পণ্যে কতটা কমাতে হবে বা সেটা এনবিআর জানিয়ে দেবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে নূ্যনতম দেড়শ টাকায়, যা দুই বছর আগে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায় কিনেছেন ভোক্তারা। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৭০ টাকায়; যা দুই বছর আগে ১০০ টাকারও কম দামে কেনা যেত। ছোলার দামও গত বছরের তুলনায় কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। রোজার মাস না আসতেই এক কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর রোজার মাসের খাদ্য তালিকার অন্যতম অনুসঙ্গ খেজুরের আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক মাস ধরে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। অপরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ রয়েছে। চিনিতে এখন কেজিতে ৪২ টাকার মতো শুল্ক দিতে হচ্ছে। আগে খোলা খেজুরে কেজিতে ৫-১০ টাকা এবং বাক্সভর্তি খেজুরে কেজিতে ৩০ টাকা করে শুল্ক দিতে হতো। নতুন নিয়মে খোলা খেজুরে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা করে এবং প্যাকেটজাত খেজুরে কেজিতে ১৪৫ টাকা করে শুল্ক দিতে হবে। এত বেশি শুল্ক দিতে গিয়ে খেজুরের যে দাম হবে, সেই দামে তা বিক্রি হবে কিনা, এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ভোক্তা পর্যায়ে অস্থির হয়ে উঠেছে ডালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রায় সব ধরনের ডাল জাতীয় পণ্যের দাম। খুচরা বাজারে এক কেজি মসুর ডাল কিনতে ভোক্তাদের গুণতে হচ্ছে ১৩৮-১৪০ টাকা। আর মুগ ডালের দাম হয়েছে ১৬৮ টাকা। এলসি খুলতে না পারলে আমদানিনির্ভর ডালের বাজার আরও ঊর্ধ্বে উঠতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন; রোজা সামনে রেখে তিন পণ্যের শুল্ক কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, এতে ক্রেতারা উপকৃত হবেন কিনা। অতীতের অভিজ্ঞতা তা বলে না। বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশে এই হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর জন্য দায়ী এ দেশের অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। তারা পবিত্র রমজানে প্রতিবছরই দাম বাড়ায়। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। যতদিন ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই। এ জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।