রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গ্যাস সংকটে বিদু্যৎ খাতে উদ্বেগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গ্যাস সংকটে বিদু্যৎ খাতে উদ্বেগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

গ্যাস সংকটকে কেন্দ্র করে এর নেতিবাচক প্রভাব সামনে আসছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, যে কোনো কারণেই হোক, নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে সংকট আমলে নিয়ে তা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে যে, চলমান গ্যাস সংকট এখন বিদু্যৎ খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই গ্যাসভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে বলেও জানা যাচ্ছে। এমনকি শীতেই গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে বিদু্যৎ বিভাগ। এছাড়াও আমদানিকৃত গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও সময়ের প্রয়োজন। আর এ অবস্থায় গ্যাসের জোগান না পেলে ব্যাহত হতে পারে সামগ্রিক বিদু্যৎ উৎপাদন। অন্যদিকে, বিকল্প জ্বালানিতে বাড়বে উৎপাদন ব্যয়।

আমরা বলতে চাই, গ্যাস সংকটসহ সার্বিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানো যাবে না যে, জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন- দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। কেননা, ফেব্রম্নয়ারি থেকেই বিদু্যতের চাহিদা বাড়তে থাকবে; তখন গ্যাসের বিকল্প জ্বালানির প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে, বর্তমান ডলার মূল্য ও জ্বালানির দামের অস্বাভাবিক ওঠানামা এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ। যা দেশের শিল্পসহ সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতিও। আমরা মনে করি, যখন এমন আলোচনা আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, জ্বালানি বিশ্লেষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, তথ্য মতে, দেশের উৎপাদিত বিদু্যতের প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি গ্যাসভিত্তিক। মূলত কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদু্যত থেকে গ্যাসে উৎপাদন ব্যয় ৫০ শতাংশ কম। এছাড়া বর্তমানে পণ্য পরিবহণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে বাড়তি শুল্ক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ও জ্বালানি তেল আমাদনি ব্যয়ে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। সেই হিসেবে বিকল্প জ্বালানিতে বিদু্যৎ পেতে গ্রাহকের ওপর চাপ বাড়বে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে, এই পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া স্মর্তব্য যে, বর্তমানে দেশে বিদু্যতের গড় চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট এবং উৎপাদন সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। ফলে দেখা যাচ্ছে, গড়ে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এটিও লক্ষণীয়, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবার চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। সেই হিসেবে মার্চে এই চাহিদা ১৪ হাজার এবং এপ্রিলে ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও আবাসিক ও ক্ষুদ্র শিল্পে গ্যাসের সংকট থাকায় চাপ বাড়বে বিদু্যতের ওপর। যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে- এমন আলোচনাও আসছে।

আমরা মনে করি, চলমান গ্যাস সংকট যে বিদু্যৎ খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা আমলে নেওয়া এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে; প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিকের আশ্বাস দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু এটাও আমলে নেওয়া দরকার, এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে এটাও জানা যাচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে চলমান সরবরাহ আরও দুই মাস স্থায়ী হতে পারে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলমান গ্যাস সংকট এখন বিদু্যৎ খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ- এটা যেমন আমলে নিতে হবে; তেমনি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে এই বিষয়টিকেও এড়ানো যাবে না। এছাড়া শীতেই গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে বিদু্যৎ বিভাগ- অন্যদিকে, ফেব্রম্নয়ারি থেকেই বিদু্যতের চাহিদা বাড়তে থাকবে বলে জানা যাচ্ছে- যা বিবেচনায় রাখা জরুরি। সামগ্রিকভাবে গ্যাস সংকটকে কেন্দ্র করে বিদু্যত খাতে উদ্বেগসহ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে