সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ৩ জন করে এবং নাটোরের বড়াইগ্রাম, কক্সবাজারের ঈদগাঁও, ফেনী, শেরপুরের নকলা, মেহেরপুরের গাংনী ও ঢাকার ডেমরায় একজন করে নিহত হন। রোববার বিকাল থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার যে, এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে- মালবাহী পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষ, শ্যালো ইঞ্জিলচালিত ভটভটির সঙ্গে মালবাহী ট্রাকের সংঘর্ষ, ট্রলি গাড়ির ধাক্কায়, কাভার্ড ভ্যানের চাপাসহ রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকের ধাক্কায়।
আমরা বলতে চাই, যেভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা- তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠেছে তা আমলে নিতে হবে। যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামিগ্রক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে জানা গিয়েছিল যে, ২০২৩ সালে সারাদেশে পাঁচ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ২৪ জন নিহত হয়েছেন। ফলে সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠছে তা এড়ানো যাবে না।
আমরা বলতে চাই, যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এর আগে বারবার এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও সামনে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
আমরা মনে করি, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছ যে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না। ফলে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, এবারের দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিন। এটাও মনে রাখতে হবে, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। অন্যদিকে, ট্রেন ও নৌ দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।