রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা

পরিবারের গুরুজনসহ সবাইকে সম্মান করা শেখাতে হবে ছোটবেলা থেকেই। পরিবারে যে গৃহকর্মী, তাকেও সম্মান করতে শেখানো পিতামাতার অন্যতম দায়িত্ব। শিশুর সামনে অন্যদের হেয় করা বা কটাক্ষ করা থেকে বড়দের নিবৃত্ত থাকতে হবে।
রূপম চক্রবর্ত্তী
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা

লেখাটা যখন শুরু করছি তখন ফেসবুকে একজন বন্ধুর একটা স্ট্যাটাস দেখছিলাম। তিনি লিখেছেন ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করার পর মা-বাবা নিঃসঙ্গ বেশি হচ্ছেন। এই লাইনটা আমার মনে একটা দাগ রেখে গেল। বিভিন্ন সময় পত্রিকা খুললে কতগুলো ঘটনার সংবাদ দেখে খুবই মর্মাহত হয়ে পড়ি। কিছু সংবাদ দেখি অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। অনেকে আছেন যারা বিদেশ থেকে আসতে চান না। কেউ কেউ সেখানে বিয়ে করে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এদিকে দেশে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখা শোনা করারও মানুষ পাওয়া যায় না। আবার অন্যদিকে, নৈতিক এবং সুশিক্ষার অভাবে দেশে থাকা অনেক ছেলে এতটুকু বিবেক বর্জিত হয়ে যাচ্ছে যে, সম্পদের লোভে মা-বাবাকে সেবা করার পরিবর্তে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতেও তাদের মনে দাগ কাটে না। কিছুদিন আগে জীবনের শেষ সম্বল জমি বিক্রির ৩১ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ৬৯ বয়সি জয়নাল আবেদীন। পথে ছিনতাইকারীর হামলা। ছিনতাইকারীরা আর কেউ নয়, নিজের তিন ছেলে। সঙ্গে কয়েকজন ভাড়াটে লোক। বাবাকে বেধড়ক পিটিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় সব টাকা। লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে জখম করে বাবাকে।

খেয়াল করলেই দেখবেন কিশোর গ্যাং, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, মাদকের ব্যাপক ব্যবহার, অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তিতে লেখাপড়ার প্রতি অমনোযোগী, শিক্ষক হত্যা, সম্প্র্রদায়গত বিরোধ, দুর্নীতি আর ঘুষের প্রতি মানুষের লোভ সাধারণ বিবেকবান মানুষকে চিন্তার জগতে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে সৃষ্টিশীল কিছু করার সম্ভাবনাময় অনেক ক্ষমতা আছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে না লাগিয়ে আমরা যদি ভাবি ভালো কিছু, বড় কিছু, সুন্দর কিছু আমার দ্বারা সম্ভবই নয়। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, মেধাবী যতটুকু ছিলাম, পথের দিশা ততটুকুই পাইনি, সম্ভাবনাগুলো সব অঙ্কুরেই ঝরে গিয়েছিল। পারিপার্শ্বিক সমালোচনার ভয়ে আমরা যদি নিজের পরিধিকে ছোট করে ফেলি তাহলে দেখব আমার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ না ঘটার কারণে সমাজের মানুষকে ভালো কিছু দেওয়া থেকে বঞ্চিত করলাম। প্রত্যেকের ভালো থাকার মাধ্যমে আমাদের চলার পথ সুন্দর ও আনন্দময় হবে। প্রতিটি সমাজেই সেবা পরায়ণ সুসন্তান আসুক। যে সন্তানগুলো সমাজ পরিবর্তনে চমৎকার দায়িত্ব পালন করবে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবক্ষয় চরমে চলে যাচ্ছে। খবরের কাগজগুলো প্রতিনিয়ত ছাত্রসমাজ আর যুব সম্প্রদায়ের বিপদগামীতার সংবাদ দিচ্ছে।

আমাদের চলার পথে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা থাকবে। এক ব্যক্তি যদি তার জীবনকে ভিন্ন মেজাজে সাজাতে পারেন তাহলে দেখা যাবে তার দেখাদেখি অনেক মানুষের পরিবর্তন হবে। ছোট থেকে আমরা বড় হয়েছি রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান, অথবা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা শুনে শুনে। সবগুলো সমালোচনা যে গঠনমূলক তা কিন্তু নয়। এমন সব সমালোচনা করি যেগুলো কারো ব্যক্তি জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। আরেকজনের সমালোচনা করার আগে নিজেই নিজের সমালোচনা করতে হবে। প্রতিদিন নিজেকে একবার অন্তত আয়নায় দেখতে হবে। আমরা কি করছি, কীভাবে চলছি, আমরা কতটুকু মানুষের হয়ে উঠতে পেরেছি। আমার ভেতরের জাগ্রত শুদ্ধ শক্তিকে ভালোবাসতে হবে। নিজের আত্মমর্যাদা আর আত্ম সম্মানকে কাজে লাগাতে গিয়ে কারো ক্ষতির কারণ হচ্ছি কিনা ভেবে দেখতে হবে। পুরো জগৎ সংসার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিনিয়ত আমরা অনেক সংঘাত, অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আপনি ভালো কিছু উপহার দিতে পারলেই ভালো কিছু পাওয়ার আশা রাখতে পারেন।

অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত তাদের সন্তানদের নিয়ে ভীত থাকেন। নিজেকে পরিবর্তন করে তুলি। নিজের পরিবারকে পরিবর্তন করে তুলি। অন্তত আমাদের নিজ নিজ পরিবারের সন্তানদের যদি সুস্থ, সুন্দর ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়ে সুন্দর পরিবেশে গড়ে তুলি তাহলে ভবিষ্যতে অনেক সুফল পেতে পারি। আমি কামনা করছি, আমাদের প্রতিটি পরিবারে সুসন্তান সৃষ্টি হোক। চোখের সামনে প্রতিনিয়ত আমরা কত ঘটনা দেখতে পাই। সুশিক্ষার অভাবে অনেক ছেলেমেয়ে তার পিতামাতার অবাধ্য হচ্ছে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। পারিবারিক সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি সন্তানের মধ্যে সৃজনশীল মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। সন্তান যাতে ভবিষ্যতে নিজ শক্তিকে ধ্বংসের কাজে পরিচালিত না করে সেভাবে প্রতিটি সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে। দেশ গঠনের ক্ষেত্রে সবার ইতিবাচক মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কাজ করে। রাজনীতি থেকে শুরু করে যে কোনো নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ যে কোনোভাবে ভালো কাজ করতে পারেন। আমরা আমাদের শক্তিকে ধ্বংসের কাজে যেমন ব্যবহার করতে পারি তেমনি সৃষ্টির কাজেও ব্যবহার করতে পারি।

তাই আসুন আমরা ভালো চিন্তা করি। ভালো কিছু সৃষ্টি করি। মানবতার জন্য কাজ করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের উন্নত ভাবনার সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েরাও যাতে অংশীদার হয় তার দিকে খেয়াল রেখে চলব। প্রতিটি ব্যক্তি নিয়েই একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র। এক ব্যক্তির উন্নয়নের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের যদি নিজেকে সাজিয়ে তুলি। অপরের সমালোচনার আগে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে সমাজের মানুষকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। কেননা, সময় আমাদের পাল্টে দেবে। সময়ের গতিতে মানুষ মানুষকে বুঝতে পারবে যদি মানুষ নিজেকে বদলায় তার আচরণ আর চিন্তার মাধ্যমে। আমাদের পরিবর্তনের মাধ্যমে একটা সময় আসবে যখন সব আনন্দ বেদনার সম্মিলিত সাক্ষী হয়ে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। নিজেকে নতুন করে জানতে এবং চিনতে শেখার মাধ্যমে নতুন দ্বার যেন উন্মোচিত করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

শিশু থেকে মা-বাবা সবাই আজকে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় মোবাইলটা পাশে আছে কিনা দেখি। যদি হাতের কাছে পেয়ে যায় তাহলে একটু হলেও ফেসবুকে ঢুকে পড়ি। পরিচিত আর অপরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করার জন্য কিছু সময় অতিবাহিত করি। দ্রম্নত যোগাযোগের ক্ষেত্রে নেট দুনিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিনিয়ত মোবাইলে যোগাযোগ করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করছি। যার ফলে আমাদের নৈতিক সুশিক্ষার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে তত আমরা মিথ্যা কথা বেশি বলছি। ছোট বেলায় বেশির ভাগ সময় সত্য কথা বলতাম। কোনো কারণে বাবাকে একটি মিথ্যা কথা বলতে গেলে তার জন্য অনেক আগে থেকে নিজে নিজে প্রশিক্ষণ নিতাম। মিথ্যা বলাটা অনেক কঠিন কাজ ছিল। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা বলাও শুরু করলাম। মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে অনেক সময় দেশের শান্তি নষ্ট করি। সঙ্গে সঙ্গে অনেকে পারিবারিক শান্তি নষ্ট করি। আবার কেউ কেউ সামাজিক শান্তি নষ্ট করি।

আমরা যারা বাংলাদেশে বাস করছি তাদের বেশিরভাগই ধার্মিক। আমাদের জীবনের সঙ্গে ধর্মীয় চিন্তাধারার একটা যোগসূত্র আছে। ধর্ম আমাকে শিক্ষা দিয়ে থাকে, মিথ্যা বলিও না। অথচ অনেক লোককে দেখা যায় অকারণে মিথ্যা বলতে। যাদের কাছ থেকে আমরা ধর্মীয় নিয়ম কানুন শিখি- তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন নিজের মতাদর্শ প্রচার করার জন্য অনেক কিছুর ভুল ব্যাখ্যা করেন। গত কয়েকদিন আগে আমার এক অফিস কলিগ আমাকে এসে বললেন দাদা আজকে প্রার্থনা করছি এমন সময় আমার পাশের ব্যক্তির মোবাইলে একটি কল এসেছে। প্রার্থনারত পাশের ব্যক্তি বললেন তিনি মার্কেটে আছেন। সারাদিন মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে। যার জন্য প্রার্থনারত অবস্থায় ব্যক্তিটি মিথ্যা বলেছেন। এবার যদি আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলি সেখানেও দেখা যাবে অনেক গলদ আছে। আমার ছেলে বা মেয়েটি আমার পাশে বসে লেখাপড়া করছে। এমন সময় আমার মোবাইলে একটা ফোন এলো। ছেলেদের সামনে মোবাইলে বললাম আমি এখন বাড়িতে বা বাসায় নেই। আমি বাইরে আছি। অপর প্রান্তের লোককে বলা মিথ্যা কথাটা আমার ছোট ছেলেটি বুঝতে পারল আমি বাসার পরিবর্তে বাইরে বলেছি যেটা পুরোপুরি মিথ্যা কথা। আমার ছোট ছেলেটি কয়েকদিন পর আমার সঙ্গে মোবাইলে মিথ্যা বলা শুরু করে দিয়েছে। নিজের অজান্তে আমার ছেলেটিকে মিথ্যা বলা শিখিয়ে দিলাম। এসব মিথ্যা বলার অনুশীলন পরবর্তী সময়ে বড় মিথ্যার কৌশল শিক্ষা দেয়।

মিথ্যা কথা বলতে বলতে কেউ এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছেন যারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বানোয়াট, আজগুবি গল্প প্রচার করে মানুষকে প্রতি নিয়ত বিভ্রান্ত করছেন। এই সব ব্যক্তি ফেসবুকে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কত শিক্ষিত মানুষের সম্মান নষ্ট করেছে তার হিসাব দিতে গেলে অনেক কিছু লিখা যায়। অনেক মানুষের বাড়ি ঘর পোড়ানো হয়েছে। অনেক মানুষের বাড়ি লুট করা হয়েছে। মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। এই মিথ্যা চর্চা, মিথ্যা তথ্য পরিবেশন সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় মিথ্যার কারণে অনেকের পরিবার নষ্ট হতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে আমরা অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখেছি। চারদিকে কেন যেন মনে হচ্ছে মিথ্যা বলাটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। চলুন আমরা সত্য বলার চেষ্টা করি। প্রতিদিন বাড়িতে বসে, বাসায় বসে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সত্য কথা বলার চেষ্টা করি। সত্য বলা আমাদের নৈতিক শিক্ষার অংশ।

সত্য কথা বলার অভ্যাস হলে শিশু- কিশোরদের চরিত্র সুন্দর হয়ে উঠবে। চরিত্র সুন্দর হলে তার চালচলন সুন্দর হয়ে উঠবে। চরিত্রবান ব্যক্তি যে কোনো অপরাধ করার সময় চিন্তা করে করবেন। আজকে যদি চারদিকে একটু খেয়াল করা হয় তাহলে দেখা যাবে অনেক লেখাপড়া জানা ব্যক্তি সামান্য ঘুষের জন্য নিজের চরিত্র কলঙ্কিত করছে। লেখাপড়া না জানা একজন চোরের চাইতেও একজন ভদ্রবেশী ঘুষখোর অফিসার অনেক ভয়ংকর। যতদিন দেশের মানুষের চিন্তাচেতনার পরিবর্তন ঘটবে না ততদিন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে সময় লাগবে। তাই ভালো চিন্তাচেতনায় প্রত্যেকের মন পরিবর্তন করতে হবে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে আগামীর পথে।

শিশুকাল থেকে প্রতিটি পরিবারেই শিশুদের জন্য নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। নৈতিক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা- যা মানুষকে ভালো ও মন্দ; ন্যায় ও অন্যায়; শুভ ও অশুভের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে তার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। যেসব পরিবারে পিতামাতা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের সন্তান স্বাভাবিকভাবে শিশুকাল থেকেই সে শিক্ষা তাদের মানসপটে গ্রহণ করে। সুকুমার মানবিক গুণাবলি শিশুকাল থেকেই পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয়। এ বয়সে শিশু যে শিক্ষাটি পেয়ে থাকে, সেটি তার সারা জীবনের পথ চলায় পাথেয় হয় এবং জীবনকে সহজ করে দেয়। একটি সুন্দর সমাজ ও আর্দশ রাষ্ট্র গঠনের জন্য সুনাগরিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুনাগরিক হওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে সমাজের নাগরিকরা নৈতিকতার মানে যতটুকু উত্তীর্ণ, সে সমাজে ন্যায়নীতির বাস্তবায়ন ততটা সুন্দর হয়। অনৈতিক চর্চা সমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

পরিবারের গুরুজনসহ সবাইকে সম্মান করা শেখাতে হবে ছোটবেলা থেকেই। পরিবারে যে গৃহকর্মী, তাকেও সম্মান করতে শেখানো পিতামাতার অন্যতম দায়িত্ব। শিশুর সামনে অন্যদের হেয় করা বা কটাক্ষ করা থেকে বড়দের নিবৃত্ত থাকতে হবে।

\হএতে করে শিশুরা তাদের শৈশবকাল থেকেই বড়দের কাছ থেকে নৈতিক আচরণের শিক্ষা পাবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা, তাদের সমস্যায় এগিয়ে যাওয়া, তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার বিষয়ে শিশুকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই বড়রা যা করে; তারা তা শেখে। এজন্য অভিভাবকদের আচরণ হতে হবে মার্জিত, সুন্দর ও শিক্ষণীয়। নিজের দেশকে ভালোবাসুন। দেশের মানুষকে ভালোবাসুন। দেশের উন্নয়নে কাজ করুন। সত্য কথা বলার সাহসিকতা নিয়ে একজন নাগরিক কথা বলবেন। তাই আসুন সবার সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা সত্য কথা বলার অভ্যাস করি এবং আমাদের নৈতিক চরিত্রের পরিবর্তন করি। আমরা অনেকে আছি মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে অনেক কিছু বলি। এই সব বলার সঙ্গে সবার কাজের যেন মিল থাকে। মানুষকে যেটা প্রতিশ্রম্নতি দেব সেই অনুসারে চলার চেষ্টা করব। আমরা মিথ্যাবাদী না হয়ে নিজের মন মানসিকতা এমন এক আদর্শে পরিচালিত করব যেন নতুন প্রজন্ম আমাদের মনে রাখে। নতুন প্রজন্মকে এমন এক জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব যেন তারা প্রকৃত সত্যবাদী হয়ে দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারে।

রূপম চক্রবর্ত্তী : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে