হঠাৎ করেই ভোক্তা পর্যায়ে অস্থির হয়ে উঠেছে ডালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রায় সব ধরনের ডাল জাতীয় পণ্যের দাম। খুচরা বাজারে এক কেজি মসুর ডাল কিনতে ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ১৩৮-১৪০ টাকা। আর মুগ ডালের দাম হয়েছে ১৬৮ টাকা। এলসি খুলতে না পারলে আমদানিনির্ভর ডালের বাজার আরও ঊর্ধ্বে উঠতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমন অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। হঠাৎ করেই ডালের এমন চড়া দামের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের। ক্রেতারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ডাল-ভাত খেয়েও জীবনযাপন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। গরিব মানুষজন ভাতের সঙ্গে ডাল খেয়ে কোনোরকমে জীবন চালিয়ে নিত। কিন্তু হঠাৎ করেই ডালের দাম এমন বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মুগ ডাল ১৬৮ টাকা, বুটের ডাল ১০৮ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ টাকা, মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ৯৬ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, ডাবলি ৭২ টাকা ও মোটা ডাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিভাবেই বেশি দামের কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। আড়ত থেকে অতিরিক্ত দামে ডাল কিনে আনতে হচ্ছে, সেই কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেশি দামে ডাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাতিল করা হবে লাইসেন্স। সেইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ছাড়পত্রও বন্ধ করা হবে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই উদ্যোগ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। কিন্তু আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
এটা সত্য, খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হার ছিল ১২.৫৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৮.৫০ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে ছিল ১২.৩৭ শতাংশ- যা গত ১১ বছর ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়।
বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশে এ হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর জন্য দায়ী এ দেশের অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বাজার তদারকির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন সরকারের সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।