শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বাস্তুচু্যতের সংখ্যা বাড়ছে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাস্তুচু্যতের সংখ্যা বাড়ছে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি- এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে। আর যদি এর প্রভাবে বাস্তুচু্যত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ বাস্তুচু্যত হচ্ছেন। আগামী দিনগুলোতে এ সংখ্যা তিনগুণ হতে পারে বলছেন জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর। তথ্য মতে, ইতোমধ্যে দেশে ৬০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ৭ জনে একজন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচু্যত হবেন। আর এ হিসাবে ২০৫০ সালে দেশে বাস্তুচু্যত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৩০ লাখ।

আমরা বলতে চাই, এভাবে বাস্তুচু্যত হওয়ার আশঙ্কা কতটা উৎকণ্ঠাজনক তা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। সঙ্গত কারণেই জলবায়ুর প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত এটাও আমলে নেওয়া দরকার, বাস্তুচু্যতের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালে বিশ্বে রেকর্ড ১১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছে। ২০২৪ সালে ১৩ কোটি মানুষ আশ্রয় হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, এর আগে কখনো বিশ্বে এক বছরে এত সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। উলেস্নখ্য যে, গেল বছরটিতে সর্বোচ্চ মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছেন বিশ্ববাসী। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক আইএসএফের সংঘাত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোচা, গাজায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধসহ বিভিন্ন ঘটনায় মানুষ বেশি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আমলে নেওয়া জরুরি, ইউএনএইচসিআরের এক্সটার্নাল রিলেশন্স বিভাগের পরিচালকও বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি সংঘাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন কোটি কোটি পরিবারকে বাস্তুচু্যত করার পাশাপাশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার জন্য হাত পাততে বাধ্য করেছে। সাধারণত ২০২৩ সালে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অজস্র মানুষ যে ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা এক কথায় 'অবর্ণনীয়'। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, চলতি বছর এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি যেমন বিশ্ব নেতা ও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, তেমনি দেশের সংশ্লিষ্টদেরও বাস্তুচু্যত সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, প্রাকৃতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া জলবায়ু বাস্তুচু্যত সংখ্যায়ও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম এটাও উঠে এসেছে। ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা এড়ানো যাবে না। একদিকে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রকৃতির বৈরী আচরণে মানুষ বাস্তুচু্যত হচ্ছেন। অন্যদিকে, জলবায়ুর প্রভাবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মিঠাপানির উৎস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় কৃষি উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে জীবিকা হারিয়েছেন অনেকে এমনটিও আলোচনায় আসছে। আর এতে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বসবাসের ক্ষেত্রে বস্তুত্মচু্যত ঘটার আরেকটি বড় কারণ হলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক ঘূর্ণিঝড়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এসব ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ইতোমধ্যে দেশে ৬০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন এটি সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে সব হারিয়ে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর নদীভাঙনেও অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে বাস্তুচু্যত হচ্ছে। অন্যদিকে, বাস্তুচু্যতের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে