পাঠক মত
শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাসেল হোসাইন
শীতের প্রকোপ বাড়ছে। চলতি শীত অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। এ সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়ছেন বেশি। রোববার (১৪ জানুয়ারি) আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইছে মৃদ শৈত্যপ্রবহ। যা অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। রয়েছে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না আসায় গত কিছুদিন ধরে দিনের তাপমাত্রা সারা দেশে গড়ে ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি কম থাকছে। রাতের তাপমাত্রা তেমন কমেনি। এতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি অনেকটাই বেড়ে গেছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার সঙ্গে রয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শীতের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত উত্তরাঞ্চসহ দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরে শীতার্ত মানুষের দুঃসহ দিনযাপনের করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ।পৌষ এবং মাঘ এ দুমাস শীতকাল।প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পরিবর্তন হবে। এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য প্রতিটি ঋতুই যেন উপভোগ করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত জরুরি। শতীকাল কারো কারো জন্য আনন্দের বিষয়। শীত মানেই কুয়াশা-মোড়ানো ভোরে চুলোর পাশে বসে পিঠা খাওয়া। গ্রামীণ পরিবেশে ঝড়া পাতা জড়ো করে জালিয়ে আগুন তাপানো। গল্পের আসরে বসে ধুমায়িত চা-কফির উষ্ণ স্বাদ। দীর্ঘ রাতে লেপ-কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন শত আরাধনার ধন। শীতে অভাবী মানুষের জন্য এখন জরুরি দরকার হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। কিন্তু গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য। মূলত জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মজীবী এবং ছিন্নমূল মানুষের। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরের হতদরিদ্রদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা। এর পাশাপাশি বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সড়কের পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তার গায়ে গরম কাপড় জুটবে কোত্থেকে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?
মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরিব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্যপ্রাপ্য। তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। বিত্তবানদের যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। এ জন্য দরকার শুধু সদিচ্ছার। আর মানুষের জন্য যদি সামান্য এই সদিচ্ছাটুকু না জাগে, তাহলে কী এ কথা শুধু বলা আর শোনার জন্যই- "মানুষ মানুষের জন্য"। আসুন, আমরা মানবিক মূল্যবোধ থেকে সবাই মিলে শীতে ফুটপাথে বা খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পাশে সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি।
রাসেল হোসাইন
শিক্ষার্থী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গোপালগঞ্জ।