সারাদেশে অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধের অভিযান চলছে। গত দুই দিনে, যশোরে ৪ ক্লিনিক সিলগালা, ৪টিকে জরিমানা, খুলনায় ২ প্রতিষ্ঠানকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা, চাঁদপুরে হাসপাতাল সিলগালা ও নারায়ণগঞ্জে ১১ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে বন্ধের অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো অবৈধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে তার সুনিদিষ্ট কোনো তথ্য নেই অধিদপ্তরের কাছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এটি করতে পারলে শহরে রোগীর চাপ কমে আসবে। সারাজীবন অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলাম। এখনো আছি। স্বাস্থ্য খাতে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি, অবহেলা সহ্য করা হবে না। শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম পরিদর্শন ও প্রার্থনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, যেসব হাসপাতাল লাইসেন্সবিহীন, অনুমতি নেই এবং যেগুলোর অবকাঠামো নেই সেসব হাসপাতাল বন্ধ করতে হবে। কেউ অনিয়ম করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেটি একদিনে সম্ভব নয়, ধাপে ধাপে করা হবে। সেজন্য আমাকে সময় দিতে হবে।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। অন্যদিকে, ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভুয়া ডাক্তার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
এর আগে অনুমোদন ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর ছয়টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। এরপরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এবার নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসে নতুনভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
আমরা মনে করি, কেবল অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে হবে না, অনুমোদনহীন ফার্মেসির বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। দেশে প্রায় দুই-আড়াই লাখ ফার্মেসি আছে। যাদের একটি বড় অংশই অনিবন্ধিত। এর পাশাপাশি সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভুয়া ডাক্তার। এদের চিহ্নিত করতে না পারলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে।
স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরনো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতারণা দৌরাত্ম্য কমে আসবে।