নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে কোনোভাবেই খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যাবে না- এমনটি বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন। এমনকি অনেকে বলে থাকেন, রস গরম করে খেলেও এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অন্যদিকে এটাও লক্ষণীয়, প্রতিবছর শীত মৌসুম আসার আগে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে নিপাহ ভাইরাস রোধে জনসচেতনতা কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, পাবনার ঈশ্বরদীতে খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পাশের স্থানীয় একটি খেজুরের বাগান থেকে খেজুরের রস খেয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে। এরপর রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আমরা বলতে চাই, দেশে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক- যা বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এই প্রাণঘাতী ভাইরাস দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়েছে বলেও জানা যায়। অন্যদিকে এর আগে আইইডিসিআর বলেছিল, এতদিন কেবল উত্তরাঞ্চলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে বলে ধারণা করা হলেও, দেশের মধ্যাঞ্চলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। প্রসঙ্গত এটাও উলেস্নখ্য, নিপাহ সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারির অন্যতম হুমকি বলেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ফলে আবার যখন পাবনার ঈশ্বরদীতে নিপাহ ভাইরাসে মৃতু্যর ঘটনা ঘটলো তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে গিয়ে ও এলাকাবাসীসহ সবাইকে সচেতন করা হয়েছে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সচেতনতা, ব্যাপক প্রচার প্রচারণা জরুরি। শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত উদ্যোগ আরও বৃদ্ধি করা দরকার। স্মর্তব্য যে, নিপাহ ভাইরাসের টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি, ফলে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অধিকতর তৎপরতা জরুরি। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি- পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে যে, খেজুরের কাঁচা রস পান করার কারণেই সাধারণত নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, আর এ-সংক্রান্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, শীতের সময়ে খেজুরের রস সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এটি কতটা উদ্বেগের তা এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
মনে রাখা জরুরি যে, নিপাহ ভাইরাস হচ্ছে বাদুড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত একটি ভাইরাস। এর সংক্রমণের ফলে মৃতু্যহার ৪০-৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বলেও জানা যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, আক্রান্ত মানুষ, বাদুড় ও শূকরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, শীতকাল বা অন্য যে কোনো সময়ে কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকা সহ যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে সেগুলো আমলে নিতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। যেহেতু নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী কোনো ওষুধ বা টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই যে উত্তম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি বলতে চাই, নিপাহ ভাইরাস প্রতিবছর নানাভাবে ডালপালা বিস্তার করছে যা উদ্বেগজনক। ফলে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের এখনই নিপাহ ভাইরাস নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। জনসচেতনতা তৈরিসহ খেজুর রস বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।