শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

মুদ্রানীতি ঘোষণা যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

  ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মুদ্রানীতি ঘোষণা যথাযথ বাস্তবায়ন হোক

জীবনযাপনের ব্যয় সংক্রান্ত নানা ধরনের বিষয় প্রতিনিয়ত আলোচনায় আসে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, জীবনযাত্রা যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তথ্য মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় ষান্মাসিক (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা যাচ্ছে, দেশের চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে টাকার সরবরাহ কমাতে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত এ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে- এমনটিও জানা যাচ্ছে। যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৯.৪১ শতাংশ। গত বুধবার বিকাল ৩টায় এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।

আমরা মনে করি, মুদ্রানীতির ঘোষণা আর একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, মুদ্রানীতি ঘোষণার পর গভর্নর বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত এ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, এটাও জানা যাচ্ছে. এবারের মুদ্রানীতিতে ৪টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং পলিসি করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে এই মুদ্রানীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ- এটাও উঠে এসেছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমলে অসুবিধা নেই বলেও্লমন্তব্য করেছেন গভর্নর। অগ্রাধিকার দেওয়া চারটি বিষয় হলো- চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মুদ্রানীতিতে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে মুদ্রনীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো সামনে আসছে, তা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। তেমনি যে চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে তার যথার্থ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

এটাও লক্ষণীয়, জানা যাচ্ছে যে, আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত মতে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে. বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের দিকে হাঁটছে।

আমরা বলতে চাই, মুদ্রানীতি সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (ডিসেম্বর পর্যন্ত) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে মূল্যস্ফীতির মতো ঋণ প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি। গত নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ কম। এছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ মুদ্রার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৩ শতাংশে নেমেছে। ব্রড মানি বা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও অর্জিত হয়নি- যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানা যায়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে জীবনযাত্রার ব্যয় সংক্রান্ত নানা ধরনের আলোচনা উঠে আসছে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে জীবনযাপন এমনটিও খবরে এসেছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে