দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, বিরোধী দল কারা
তরুণরা চায় সুশাসন এবং বাস্তবতার নিরীক্ষে সমালোচনাবিহীন আইন। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। নতুন সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশাই করি আমরা।
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শফিকুল ইসলাম খোকন
এখন নির্বাচনপরবর্তী সময়। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সামনে অনেক আবশ্যিক করণীয় কাজ। সাধারণত নতুন সরকার গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত মাস ছয়েক সময় পায়। এবার এ সুযোগ নেই। কাগজে-কলমে নতুন সরকার হলেও বস্তুত এটি পূর্বতম সরকারের নতুন রূপ। নতুন রূপ কিন্তু কাজ সব পুরনো, জমে থাকা কাজ যেসব কাজ একেবারে হাত পুড়িয়ে দিচ্ছে। নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ গঠন, শপথ, সংসদের বিরোধী দল গঠন, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা ও নির্বাচন ইত্যাদি। কিন্তু এবার কিছুটা ভিন্নতর বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক সংকট প্রশমন, নিত্যপণ্যের দাম লাগামে আনা, বিশ্বের কাছে নির্বাচন ও নির্বাচনপরবর্তী সরকার পরিচালনায় আস্থাশীলতা এবং সংসদের বিরোধী দল নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। ৩০০ সংসদীয় আসনের যে ২৯৯টিতে ৭ জানুয়ারি ভোট হয়েছে, তার মধ্যে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ২২২ আসনে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন ১১ আসনে, অন্যান্য ৩টি আসন। এছাড়া ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ভোট না পড়ায় নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠতে পারেনি। দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশ না নেওয়া নির্বাচনে ভোট কম পড়ার অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা যায়। তাছাড়া আরও কিছু কারণে ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসেননি।
সার্বিকভাবে নির্বাচনটিকে গ্রহণ করে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক। তারপরও সারা বিশ্বে এর কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখার বিষয়। কারণ এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে দেশের রপ্তানি ও বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্য। বস্তুত এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছে বটে, তবে যেহেতু জনগণের একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সেহেতু দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার একটি উপাদান রয়েই গেছে। এখানে নতুন সরকারের নতুন নতুন কাজের মাত্রা যোগ হয়েছে। নতুন সরকারের উচিত হবে এটা কীভাবে দূর করা যায়, সেই চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে নির্বাচনের বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বাধাগুলো অপসারণ করা উচিত। কারণ এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সেক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি এবং সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে বিরোধী দলগুলোকে। মনে রাখতে হবে, অস্থিরতার ফলে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিলে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই সব বিরোধী দলকে আস্থায় এনে দেশ পরিচালনা করাই নতুন সরকারের জন্য সুবুদ্ধির পরিচায়ক হবে। বস্তুত জাতীয় নির্বাচনে বড় বিজয় দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বিশেষত রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলে মনে করি আমরা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে সর্বব্যাপী দুর্নীতি দমন করা হবে নতুন সরকারের আরেকটি বড় দায়িত্ব। বস্তুত দুর্নীতি দেশের অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে নতুন সরকারকে পদে পদে সংকটে পড়তে হবে। নতুন সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশাই করি আমরা।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন এবং সংসদের বিরোধী দল কারা হবে এ নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই আলোচনার মুখ্য হয়ে উঠেছে। পক্ষে বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও ওঠে এসেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের ২২২ আসন, স্বতন্ত্র ৬২ আসনে বিজয়ী হওয়ায় এখন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এমন অবস্থায় বিরোধী দল কারা হবে সংবিধানে স্পষ্ট উলেস্নখ নেই। কিন্তু আইনজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে একটি আইন হয়ে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, প্রয়োজনীয়তার দিকে থেকে। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ব্রিটিশ আইনের সঙ্গে অনেক আইন সংযোজন হয়েছে এবং অনেক আইন নতুন করে প্রণীত হয়েছে। আবার কিছু কিছু আইন বাস্তবতা এবং প্রয়োজনীয়তার দিক বিবেচনা করে প্রণীত হয়েছে। ঠিক দাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধী দল কারা হবে এটি নিয়েও নতুন আলোচনা শুরু হওয়ার পাশাপাশি আইনেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও সরকার দলের পক্ষের আইন মন্ত্রী বিরোধী দল কারা হবে এটা এখনো স্পষ্ট করেনি।
সংবিধান বা কোন আইন-বিধিতে বিরোধী দল ইসু্যতে কোনো নির্দেশনা নেই, কেবল সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে 'বিরোধী দলীয় নেতা' কথাটি উলেস্নখ রয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট) ধারা অনুযায়ী, 'বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।' অপরদিকে সংবিধানের ১৫২ নম্বর ধারায় রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় বলে দেওয়া হয়েছে। এতে 'রাজনৈতিক দল' বলিতে এমন একটি অধিসংঘ বা ব্যক্তিসমষ্টি অন্তর্ভুক্ত, যে অধিসংঘ বা ব্যক্তিসমষ্টি সংসদের অভ্যন্তরে বা বাহিরে স্বাতন্ত্র্যসূচক কোনো নামে কার্য করেন এবং কোনো রাজনৈতিক মত প্রচারের বা কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্যান্য অধিসংঘ হইতে পৃথক কোনো অধিসংঘ হিসাবে নিজদিগকে প্রকাশ করে'। নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের আবেদন করলে তারাই হবেন সরকারের প্রধান বিরোধী দল। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মাত্র ১১ আসনে জয়ী জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
সাধারণ ধারণা হলো, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল। গত দু'টি নির্বাচনের মতো এবারও ভোটের ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ আসনে দলনিরপেক্ষ প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে। জানা-বোঝার চেষ্টা হচ্ছে তাদের কেউ বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে পারবেন কি না। তারা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল হতে পারবেন কি না।
এখানে আমার জ্ঞানলব্ধ থেকে বলছি, জাতীয় সংসদের সরকার প্রধান হচ্ছে আওয়ামী লীগ, যে দলটি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত। জাতীয় সংসদের বিরোধী 'দল' যেহেতু এখানে 'দল' শব্দটি রয়েছে সেখানে আমি মনে করি একটি নিবন্ধিত দলই সংসদের বিরোধী দল হওয়া উচিত। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের কোনো জোট বা নিবন্ধিত দল নেই। তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি নির্বাচন করেছেন। সংসদের বিরোধী দল শব্দটি ব্যবহার করতে হলে যেহেতু আওয়ামী লীগের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আসনের সংখ্যা সেখানে অবশ্যই তাদের বিরোধী দল হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে দল যেহেতু রাজনৈতিক একটি পস্নাটফর্ম সেখানে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন জরুরী; স্বতন্ত্রদের পার্লামেন্টারি গ্রম্নপ বা সংসদের বিরোধী পক্ষ হিসেবে বলা যেতে পারে, কিন্তু বিরোধী দল নয়। জাতীয় পার্টি নিবন্ধিত দল, যা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আসন সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে আর স্বতন্ত্রদের কোনো নিবন্ধিত দল নেই এ হিসেবে বিতর্ক রয়েই যাচ্ছে। যদিও স্বতন্ত্রদের জোট আগেও হয়েছে। বিএনপির বর্জনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জেতেন ১৬ জন। সেই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের সময় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরকে চিঠি দেওয়া হয় তারা জোটবদ্ধ হবেন কি না। এরপর ১৬ জন জোটবদ্ধ হলে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে তিনটি বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের। ২০১৭ সালের মে মাসে এদের মধ্যে ১৪ জন একসঙ্গে এবং এরপর আরও দুই জন আওয়ামী লীগে ফিরে যান। এবারও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ হলে ৫০টি নারী আসনের মধ্যে ১০টি আসন পাবে, সে হিসেবে একটি জোট হওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসার পর দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন, সেই আলোচনার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা।
ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, বাংলাদেশের বিগত ১১টি সংসদের মধ্যে প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পেয়েছিল। সংসদীয় দল ও গ্রম্নপ সম্পর্কে প্রথম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনকালেই বিতর্ক ওঠে। সরকার দলীয় একজন সদস্য সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী সদস্যদের 'তথাকথিত বিরোধী দল' হিসেবে আখ্যা দিলে সরকারের বিরোধিতাকারী গ্রম্নপের এক সদস্য আপত্তি তুলে বলেছিলেন, 'আমরা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বিরোধী দল। তিনি যুক্তি হিসেবে তাদের নেতার অনুকূলে সংসদে একটি কক্ষ বরাদ্দ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ওই যুক্তিতে জাতীয় লীগের এমপি আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা উলেস্নখ করে বিরোধী দলীয় নেতার স্বীকৃতি দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সংসদে ২০ মিনিটের বিতর্কও হয়। বিতর্কের সমাপনী বক্তৃতায় সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, 'আতাউর রহমান খান একা এক দলের একজন, আরেকদলের একজন, আর কয়েকজন নির্দলীয় সদস্য মোট পাঁচ-সাতজন সদস্য সংসদ ভবনে একটি কক্ষে একটি জায়গায় বসতে চেয়েছেন এবং এ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সংসদ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যুক্তি ছিল, ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে গঠিত কোনো দলকে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। তবে ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে কোনো দল গঠিত হলে এবং ওই দলে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকলে ওই দলকে পার্লামেন্টারি গ্রম্নপ বলা যেতে পারে। কিন্তু সংসদীয় দল বলা যাবে না। যার প্রেক্ষাপটে প্রথম সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। অপরদিকে ৬ষ্ঠ সংসদে বিএনপির বাইরে একটি রাজনৈতিক দলের একজন মাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ওই ১১ দিনের ওই সংসদেও কোনো বিরোধী দল ছিল না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের পর ৩ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হয়। এরপর নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শপথ পড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সরকার গঠিত হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সরকার গঠন করা হয় ১২ জানুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এর ৮ দিন পর সরকার গঠন করা হয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি, যা দু'দিন পরই নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পড়ানো হয়, বৃহস্পতিবার মন্ত্রীদের শপথ পড়ানো হবে।
সব ক্ষেত্রেই তর্কবিতর্ক থাকে, পক্ষে বিপক্ষে কথাও থাকে। আইন প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রণয়ন হয়ে থাকে। রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলে মনে করি আমি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে সর্বব্যাপী দুর্নীতি দমন করা হবে নতুন সরকারের আরেকটি বড় দায়িত্ব। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের মাধ্যমে সংসদ পরিচালনা করাও এখন সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। বস্তুত দুর্নীতি দেশের অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে নতুন সরকারকে পদে পদে সংকটে পড়তে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারের সংখ্যা কম নয়। তরুণরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতে চায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে। বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নিজেদের মধ্যে লালন করতে। তরুণরা মেধার মূল্যায়ন, নিরাপদ জীবন, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি চায়।
তরুণরা চায় সুশাসন এবং বাস্তবতার নিরীক্ষে সমালোচনাবিহীন আইন। দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। নতুন সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশাই করি আমরা।
শফিকুল ইসলাম খোকন : কলাম লেখক