কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনা। সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬ হাজার ৯২৯টি যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত, ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হন। নৌপথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত ও ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। একই সময়ে ২ হাজার ৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ নিহত ও ১ হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭১২ জন নিহত, ২ হাজার ৩৮১ জন আহত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২০৫ জন নিহত, ২ হাজার ২৯৪ জন আহত হয়েছে। খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত, ১ হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছে। বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত, ৯৯২ জন আহত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিখুঁত, ৬৬৫ জন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত, ৯২৬ জন আহত হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ নিহত, আহত হয়েছেন ৩২১ জন। রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ নিহত ও ১ হাজার ১৬৮ জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গতি; বিপজ্জনক অভারটেকিং; রাস্তাঘাটের নির্মাণত্রম্নটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল; যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা; যানবাহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো; রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ; ট্রাফিক আইন অমান্য করা; ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি; সড়কে চাঁদাবাজি; রাস্তার উপর হাটবাজার; ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন চালানো; মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা; চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা; সড়কে আলোকসজ্জা না থাকা; রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু না থাকা।
অন্য এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত ১৫ বছরে সড়ক পথে ৫৫ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে। ৭০ হাজার মামলাও হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। অন্যদিকে, রাজধানীতে বছরে ১৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনায়।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।