বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, নতুন বছরের শুরুতেই সুখবর বয়ে আনছে রেমিট্যান্স। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেমিট্যান্সে সুখবর এলে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। কেননা, দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতিতে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে- জানুয়ারি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯১ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। আর দিনে এসেছে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ৮৩৫ কোটি টাকার বেশি।
এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্সের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার সার্বিক বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার, আলোচিত ১২ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (বিকেবি) মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার ডলার। এছাড়া এটাও লক্ষণীয়, সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চসংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবতকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
আমরা বলতে চাই, যখন প্রবাসী আয় বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন এটি আমলে নিতে হবে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি যেমন পর্যবেক্ষণ জরুরি, রেমিট্যান্স কীভাবে বাড়ানো যায় এই লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক তৎপর থাকতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রবাসী আয় দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছে। ফলে রেমিট্যান্সে যে ইতিবাচক খবর এলো, তা ধরে রাখতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। এটাও বলা দরকার যে, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামা বিষয়টি সামনে এসেছিল। সঙ্গত কারণেই এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টিকে সহজভাবে দেখারও যেমন সুযোগ নেই, তেমনি রেমিট্যান্সের অগ্রগতি ধরে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণও অপরিহার্য।
স্মর্তব্য, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন প্রবাসী আয় বৃদ্ধির খবর আসছে তখন তা আমলে নিয়ে পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।