বিশ্বে দীর্ঘ সময়ের নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড
দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ একটা অবস্থান নেয়। ফলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এমন পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রেজাউল করিম খোকন
পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা চতুথবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘ সময়ের নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকদের কাতারে আরও উপরে উঠলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করায় টানা চতুর্থবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা আটবার জয় পেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে কাঁধে দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের। নামেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। স্বৈরাচারকে উৎখাত করার আন্দোলনের পাশাপাশি, প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে। সেই থেকে প্রতিবারই জয়লাভ করেছেন এই আসনে। অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি। পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী এবং আটবারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে ৭৮ বছর বয়সে দেশ পরিচালনা করার রেকর্ড দেশে কারও নেই। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতেই এমন নজির বিরল। অন্যদিকে একক ব্যক্তি হিসেবে ৪৩ বছর ধরে একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাসও কোথাও নেই। শুধু দেশের রাজনীতি নয়, বিশ্বরাজনীতিরও আলোচিত ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একাত্তরের প্রেক্ষাপট মনে রেখে, মিয়ানমারের বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হন গোটা বিশ্বে। যে দেশকে একদিন বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তার দক্ষ নেতৃত্বে সেই দেশ যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারও সঙ্গেই শত্রম্নতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব- বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই পররাষ্ট্রনীতিতে নানামুখী ভূরাজনীতির মেরুকরণেও অনড় রেখেছেন সরকারের অবস্থান। বারবার ওঠে এসেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী নারী নেতৃত্বের তালিকায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক নেতাই তাদের নিজ নিজ দেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আছেন। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলাই ইনস্টিটিটের এক প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হুন সেন। গত বছরের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করা ৭৭ বছর বয়সী হুন সেন কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় ছিলেন ৩৮ বছর। ব্রম্ননেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ রয়েছেন সবার ওপরে। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে পার্থক্যের কারণে এ ক্ষেত্রে অস্পষ্টতাও তৈরি হয়। কারণ, কেউ কেউ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উভয় পদেই দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেছেন। আবার কেউ শুধু রাষ্ট্রপ্রধান এবং কেউ শুধু সরকারপ্রধান হিসাবে রেকর্ড গড়েছেন। তবে তাদের সবাই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নন, যেখানে শেখ হাসিনা অনন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণের মাধ্যমে ফের শুরু হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অভিযাত্রা। এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের এ যাত্রায় দেশের অভ্যন্তরে যেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনই রয়েছে দেশের বাইরেও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা, অর্থনৈতিক সংকট উতরানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন ধরে রাখাসহ দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে আরও অনেক রকম চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে রপ্তানি আয়, বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৃষ্ট টানাপড়েন তথা সম্পর্কের বরফ গলানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপর হতে হবে। ঘরে-বাইরের এসব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটাতে হবে নতুন এই মন্ত্রিসভার। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই গঠন করা হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় এবারই প্রথম নতুন মুখ হিসেবে যুক্ত হলেন ১৪ জন। আগে বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এমন পঁাঁচজন এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এবং বিগত পনেরো বছর ধরে দেশ পরিচালনা করেছে, তার অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন মন্ত্রিসভা জনবান্ধব এবং দেশের কল্যাণে গঠন করা হবে- এটা সবার প্রত্যাশা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা নবীন এবং প্রবীণদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে ইতিহাস গড়লেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার এবং মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে তিনি এ অনন্য নজির স্থাপন করলেন। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিশ্বে শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান। এরই মধ্যে তিনি চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বকে 'হার্ড পাওয়ার' হিসাবে বর্ণনা করেছে টাইম ম্যাগাজিন, বিবিসির ভাষায় সেটা 'ওয়ান উইমেন শো'। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় ৪৬তম স্থানে নাম আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০২২ সালে তার অবস্থান ছিল ৪২ নম্বরে। বিশ্বজুড়ে রাজনীতি, মানবসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসা প্রভাবশালী নারীদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বেছে নিয়ে গত মাসে এই তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন শেখ হাসিনা। নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুরু হলো পঞ্চম ধাপের যাত্রা। এক সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রসারির এই সৈনিক বিরোধীদের সঙ্গে যুগপৎভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সদস্যরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন। সে সময় ইউরোপে অবস্থানের কারণে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক শেখ হাসিনা রাজনীতিতে যুক্ত হন ছাত্রজীবনেই। ১৯৭৫ সালের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর দিলিস্নতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে। ওই বছরই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮ম বারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচত হয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ এ বছর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় এই স্বপ্ন দেখান তিনি। এবার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে যাত্রা শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয় শেখ হাসিনাকে। 'মাইনাস টু' ফর্মুলায় রাজনীতি থেকে তাকে বাদ দেওয়ার সেই চেষ্টার মধ্যেই দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেন। তারপর থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা কাটিয়ে অবিরাম গতিতে ছুটছেন শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা লাগে অর্থনীতিতে। শক্ত হাতে বৈশ্বিক এই ধাক্কা কাটিয়ে যখন অর্থনীতিকে স্বস্তির জায়গায় আনেন, ঠিক সেই সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে সংকটে ফেলে দেয়। রিজার্ভ কমতে থাকে, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুরু করে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন। নানা ইসু্য সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্ররা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশে দাঁড়ায়। এ অবস্থার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনি ইশতেহারেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুস-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিলখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। হুঁশিয়ারির পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছে দলটি। শেখ হাসিনা আরও প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দেশবাসীকে বিদেশি তথাকথিত প্রভুদের সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি। বলেছেন, তাদের (বিদেশি) কথা শুনে চললে বাংলাদেশ আর এগোবে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক, এটা সত্য। বিশেষত রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলে মনে করি আমরা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশে সর্বব্যাপী দুর্নীতি দমন করা হবে নতুন সরকারের আরেকটি বড় দায়িত্ব। বস্তুত দুর্নীতি দেশের অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে নতুন সরকারকে পদে পদে সংকটে পড়তে হবে। নতুন সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশাই করি আমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এর আগে চারবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলোকে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার মোকাবিলা করেই এগোতে পারবে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি নির্ভর করে দলনেতা ও সরকারের কৌশলের ওপর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এর আগে চারবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলোকে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার মোকাবিলা করেই এগোতে পারবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে অভিজ্ঞতার ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকলে সরকার সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। মন্ত্রিসভার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, এর বড় অংশের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে।
\হদ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ একটা অবস্থান নেয়। ফলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এমন পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক