শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকের উদ্বিগ্নতার শেষ কোথায়?
সরকারি হাইস্কুল সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নির্দিষ্টভাবে সিলেবাসের আওতায় চললেও প্রাইভেট স্কুলগুলো তাদের মতো করে তারা পাঠ্যক্রম পরিচালনা করে।
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মাহমুদুল হক আনসারী
শিক্ষা একটি জাতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। শিক্ষাকে ভাত-কাপড়ের পূর্বে স্থান করে দিতে হবে। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি মোটেও ভাবা উচিত নয়। শিক্ষার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নতি সাধন করে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত শিক্ষার স্তর কর্মসূচি যতই সুন্দর শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং বাস্তবমুখী হবে ততই সেই জাতি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জন করবে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধ যুগ বাঙালি জাতি অতিবাহিত করলেও প্রকৃত পক্ষে শিক্ষা ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্জন জাতি দেখছে না। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানামুখী শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারি- বেসরকারি প্রাইভেট নামক শিক্ষা বাঙালি জাতির মধ্যে চালু আছে; যেমন- সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, প্রাইভেট স্কুল ও মাদ্রাসা, সরকারি হাইস্কুল, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট স্কুল- যেখানে পেস্ন থেকে দশম শ্রেণি, এইচএসসি প্রাইভেট কলেজ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি- এক কথায় বলতে গেলে স্বাধীন বাংলাদেশের নানামুখী নানা ধরনের শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইচ্ছেমতো সিলেবাস তৈরি করে ছাত্রদের ওপর পড়ালেখার চাপ প্রয়োগ করা হয়। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় একটি নিয়মনীতিতে পাঠ্য কার্যক্রম চালালেও প্রাইভেট শিশু নিকেতনগুলো তাদের ইচ্ছেমতো সিলেবাস দিয়ে শিশুদের পাঠ্য কার্যক্রম চালায়।
সরকারি হাইস্কুল সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নির্দিষ্টভাবে সিলেবাসের আওতায় চললেও প্রাইভেট স্কুলগুলো তাদের মতো করে তারা পাঠ্যক্রম পরিচালনা করে।
প্রায় তিন হাজারেরও অধিক দেশে কাওমি মাদ্রাসা রয়েছে। রাজধানী থেকে গাঁ-গ্রাম পর্যন্ত তাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। এসব মাদ্রাসায়ও হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। তারা তাদের দাওরা হাদিস পর্যন্ত মাদ্রাসাগুলোতে গিয়ে সর্বশেষ দাওরা পাস করছে।
এই হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার ভালো-মন্দ সঠিকভাবে তদারকি এবং তাদের মাদ্রাসা থেকে পাস করা ছাত্রগণ কোথায় গিয়ে কর্মসংস্থান হচ্ছে সেই বিষয়েও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের খবরদারি আছে বলে মনে হয় না। নানামুখী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ভিন্ন ভিন্ন মত ও যোগ্যতা অর্জন করে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত ছাত্র বের হচ্ছে। তাদের কোথায় কর্ম সংস্থান, কোন জায়গায় গিয়ে তারা নিজেদের স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত করবে সেটিও তারা পায় না। একটি পরিবারের পাঁচজন সন্তান থাকলে তাদের পরিবারের সামর্থ্য মতে স্কুল মাদ্রাসা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জনের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়। কাউকে সরকারি আবার কাউকে কওমি মাদ্রাসায় সামর্থ্য থাকলে প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত পড়ালেখার চেষ্টা করে পরিবারের পক্ষ থেকে। কথা হচ্ছে, একজন ছাত্র সে যেখান থেকেই লেখাপড়া করে পড়ালেখা শেষ করুক না কেন, কিন্তু আমাদের দেশে তার যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্ম সংস্থান কোথায়? সে হোক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যেখান থেকেই পড়ালেখা শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো সেই সব শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কর্ম সংস্থানের মধ্যে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
যেহেতু আমাদের দেশে নানামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব সিলেবাসে শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে চালাচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা না দিলেও তাদের সেই কার্যক্রমে কোনো প্রকারের প্রতিবন্ধকতা করছে না। তাহলে ধরে নিতে হবে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সঠিকভাবে আছে। তা যদি হয় সেখান থেকে পাস করে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েট উচ্চশিক্ষিত যুবকদের অবশ্যই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো শিক্ষাকেই ছোট করে দেখার কারো অধিকার নেই। একজন ছাত্র সে যে বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করে সার্টিফিকেট অর্জন করেছে তাকে অবশ্যই সেই বিষয়ের ওপর তার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তা যদি না হয় তবে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে সামাজিকভাবে অশান্তি অভাব নানামুখী সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেহেতু দেশে বহুমুখী ও নানা ধরনের সিলেবাসের পদ্ধতিতে শিক্ষার কার্যক্রম চালু আছে, সেহেতু সব বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট ধারি শিক্ষিত যুবকদের অবশ্যই যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
দলমতগোত্র ও ধর্মের ঊর্ধ্বে মানসিক মানবিক নাগরিক অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে সব শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান গুরুত্বের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে করতে হবে। তবেই রাষ্ট্রীয় শৃংখলা অর্থনীতি অগ্রগতি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করলে ও একটি সময়ে এসে তারা সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। যখন সঠিকভাবে পড়ালেখা শেষ করে সার্টিফিকেট অর্জন করার পরও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কোনো কর্মসংস্থান হয় না। তখন অভিভাবকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময় বয়স সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট অবস্থান থাকে। সেই সব বিষয় রাষ্ট্রের যারা কর্মসূচি, কর্মপন্থা বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনাবিদ রয়েছেন তাদেরই এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ ও দুশ্চিন্তা অভিভাকদের মধ্যে- কারণ বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রমের যেই সব হাল চাল দেখতে পাচ্ছি সেই জায়গায় মোটেও অভিভাকরা সন্তুষ্ট নয়। শিক্ষা কার্যক্রম প্রাইমারি স্কুল থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বর্তমানের চিত্র অভিভাকদের ভাবিয়ে তুলছে। সেই পঞ্চাশ বছর পূর্বের শিক্ষিত আর আজকের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার ফলাফল বিশ্লেষণে অগ্রগতি আর প্রাপ্তি অনেকগুণ পিছিয়ে নাকি এগিয়ে এ নিয়ে অনেক কথা অনেক প্রশ্ন। ছোট এই লেখাতে এই সব বিষয়ে বিস্তারিত ও বিষয়ভিত্তিক বলা সম্ভব নয়। আজকের এই লেখাতে যারা শিক্ষা কারিকুলাম পাঠ্য সিলেবাস নিয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং বাস্তবায়ন করছেন তাদের উদ্দেশে বলব, আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করুণ। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি অংক ও তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবী সমৃদ্ধ সিলেবাস দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে সংকট মুক্ত করুন। শিক্ষা সেক্টর থেকে সব ধরনের দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিহত করে শিক্ষাকে দেশ জাতি ও বিশ্বের জন্য মঙ্গলময় করার প্রত্যাশা করছি।
মাহমুদুল হক আনসারী: সংগঠক, গবেষক ও কলামিষ্ট