টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা, যার নেতৃত্বে পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এক্ষেত্রে বলা দরকার, নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন। কোনো নারী হিসেবে পঞ্চম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নজির গণতান্ত্রিক বিশ্বে এটি প্রথম। প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি অভিনন্দন জানান। এরপর নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন। তাদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো নতুন সরকারের। নতুন সরকারকে আমাদের অভিনন্দন। একই সঙ্গে জনকল্যাণ এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রতিতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটিও প্রত্যাশিত।
বলা দরকার, নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ায় ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো। উলেস্নখ্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গী হচ্ছেন ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নতুন সরকার সাজিয়েছেন ১৪ জন নতুন মুখ নিয়ে। এছাড়া এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার টানা চার মেয়াদের মন্ত্রিসভায় বড় চমক দেখিয়েছেন। এবারে একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট কয়েক মন্ত্রী।
আমরা বলতে চাই, নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলো- এই যাত্রায় সামগ্রিকভাবে দেশের সার্বিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে। এছাড়া স্মর্তব্য যে, এমন বিষয় বিশ্লেষকরা বার বার তুলে ধরেছেন- দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কিন্তু দেশ থেকে দুর্নীতি রোধ হয়নি। রয়েছে ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য। সড়ক-মহাসড়কেও নৈরাজ্য কমেনি মোটেও। আছে নানা ধররেন সংকট ও চ্যালেঞ্জ। তবে এর মধ্যেই অনেক উন্নয়ন হয়েছে দেশের। সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহতও রয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে, করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে এমনটিও প্রত্যাশিত।
অন্যদিকে এটাও বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নানা ধরনের কারসাজি হয়। বিভিন্ন সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিষয়ও সামনে আসে। নানা ধরনের অভিযোগও বিদ্যমান। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেও প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, নির্বাচনের আগে ঘোষিত ইশতেহারে বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সরকারকে সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি এবং নিতপ্যণের দাম ও জনসামর্থ্যর বিষয়টি আমলে নিয়ে গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, বিভিন্ন সময়ের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া বলা দরকার, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সর্বস্তরে। সুশাসন নিশ্চিত না হলে বিভিন্ন খাতে নৈরাজ্য বেড়ে যায়। সঙ্গত কারণেই এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। জনগণের প্রত্যাশা, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেশের। সুশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশও তৈরি করতে হবে। দেশ স্থিতিশীল থাকলে দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে এবং এভাবে আরও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন সম্ভব হবে।
সর্বোপরি নতুন সরকারকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি প্রত্যাশা থাকবে, সুশাসন নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার। বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে সামগ্রিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।