মূল্যস্ফীতি নিয়ে মত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকতে পারে বলেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অনুমান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য সম্প্রতি সংশোধন করে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আমদানিতে বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এটা সত্য- বাজারে আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। টিসিবি বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন বাজারে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। একই সময়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। একই সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা ও রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ময়দার দামও বেড়েছে। বাজারে এখন প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। গত সপ্তাহেও এ দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময় খোলা ময়দার সর্বনিম্ন দাম ৬০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। তবে মানভেদে খোলা ময়দা কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৭০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে আলু ও জিরার দাম কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে টিসিবি।
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হার বেড়ে ১২.৫৬ শতাংশে পৌঁছেছে- ২০২২ সালে ছিল ৮.৫০ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে ছিল ১২.৩৭ শতাংশ- যা গত ১১ বছর ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়।
বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশে এ হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর জন্য দায়ী এ দেশের অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বাজার তদারকির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন সরকারের সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।