দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিবন্ধক। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি মারামারি, সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার, থামছে না নির্বাচনী সহিংসতা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যা সামগ্রিকভাবেই উৎকণ্ঠাজনক বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্য মতে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথক ঘটনায় পিতা-পুত্র ও অন্তঃসত্ত্বাসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ৪৫, লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে পৃথক ঘটনায় ৭ এবং শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পিতা-পুত্রকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতার জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে উপজেলা সদর। তথ্য মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০৪ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানা যায়। গত বুধবার সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া মাদারীপুর-০৩ আসনে (কালকিনি-ডাসার-সদর একাংশ) নির্বাচনীপরবর্তী সহিংসতায় জয় ও পরাজয় দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের তিন শতাধিক ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনপরবর্তী সময়ে দুই দিনে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি গ্রামে এই তান্ডব চালানো হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় কমপক্ষে আহত হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো।
আমরা বলতে চাই, দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা থেমে নেই। আর নির্বাচনের পর এমন সহিংসতা স্বভাবতই উদ্বেগজনক। কেননা, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে- সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ২৮ অক্টোবর থেকে দুর্বৃত্তরা সহিংসতা ও নাশকতা করে আসছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৭১ দিনে সারাদেশে দুর্বৃত্তরা মোট ৩০৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় ৩০২টি যানবাহন ও ২৩টি স্থাপনা পুড়ে যায়। নিহত হন ৮ জন। আহত হয়েছেন ৫ জন। অগ্নিকান্ড নির্বাপণ করতে সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৫৩৯টি ইউনিট ও ২ হাজার ৯৫৯ জন কাজ করেন। ফলে এই ধরনের সহিংস পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার যদি নির্বাচনপরবর্তী সহিংস পরিস্থিতি রোধ না হয় তবে তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা বলতে চাই, যদি একের পর এক নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে, সেটা আমলে নেওয়া জরুরি। সামগ্রিকভাবে যেমন সহিংসতার ঘটনা এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনপূর্ববর্তী যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এবং কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা যে, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। এবারেও যেমন নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তেমনি রোধ হচ্ছে না নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতার ঘটনা। সঙ্গত কারণেই নির্বাচনী সহিংসতা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর হতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে সহিংসতার ঘটনা আমলে নিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, সহিংসতা থেমে নেই- ফলে এই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। কোনো পরিস্থিতিতেই সহিংসতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নির্বাচনী সহিংসতা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।