একটি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। সঙ্গতকারণেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে তা সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধান হওয়ার অনন্য নজির গড়তে চলেছেন। রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
তথ্য মতে, ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ৬১ জন। আর জাতীয় পার্টির আসন কমে নেমেছে ১১টিতে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি। উলেস্নখ্য, রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ চলে। ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এটাও জানিয়েছেন, সারাদেশে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া সিইসি বলেছেন, সহিংসতার গুরুতর কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, এটাও এসেছে, 'নির্বাচনের যে শঙ্কা ছিল, ভোটার উপস্থিতি হয়ত আরও কম হবে, কারণ একটি বড় দল ভোট বর্জন করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে- তা হয়নি। অনেক কেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবুও ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগে স্বাধীনভাবে চেষ্টা করেছেন।'
লক্ষণীয়, বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সন্তুষ্টির বিষয়টি সামনে আসছে। এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। রোববার ভোটগ্রহণ পরিদর্শন শেষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে পর্যবেক্ষক দল এ কথা জানায়। এছাড়া এই নির্বাচন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওআইসি, রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও গাম্বিয়ার পর্যবেক্ষকরা। তারা বলেছেন, ভোটার এবং প্রার্থীর এজেন্টদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন, যেখানে তারা সন্তুষ্ট। রোববার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ অন্তত ১১ রাষ্ট্রদূত অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, প্রতিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আর তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। ফলে এবারে যখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে- আর বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও মত দিয়েছেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে; তখন তা সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি নির্বাচন হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত, অবাধ, সুষ্ঠু এবং শতভাগ সহিংসতামুক্ত। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ- আমরা অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি যে কোনো সংকট মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এটাও কাম্য। জনস্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে দেশের সার্বিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।