একটি দেশের উন্নয়নে অর্থ ও ভৌত সম্পদের পাশাপাশি মানবসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং টেকসই ও দীর্ঘমমেয়াদি উন্নয়নে মানবসম্পদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাকে ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। গাড়ি যেমন ইঞ্জিন ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া মানুষ কখনো মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে না।
শিক্ষার সংঙ্গা বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই, শিক্ষা হলো আচরণগত পরিবর্তন এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া। ঊফঁপধঃরড়হ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ বফঁপধঃঁহ থেকে এসেছে যার অর্থ ঞযব ধপঃ ড়ভ :ৎধরহরহম অর্থাৎ শিক্ষার্থীর ভবিষৎ জীবন উপযোগী কিছু কৌশল আয়ত্ত করার প্রশিক্ষণ। শিক্ষা মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি এবং জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ জাগ্রত করে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের এই যুগে কর্মসংস্থানের যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি শিক্ষার পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি পেশা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে জনগণকে জনসম্পদে পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে শিক্ষার স্তর- যেমন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বিন্যস্ত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাস্তবায়ন করতে পারলে মানুষের দক্ষতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। কেননা, সুপরিকল্পিত শিক্ষা পদ্ধতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। এ ছড়া শিক্ষা মানুষের চেতনার পরিবর্তন ঘটায়। ফলে শিক্ষিত মানুষ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভাবে এবং উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া একজন শিক্ষিত ব্যক্তির বিচার-বিশ্লেষণ,আত্ম-মূল্যায়ন ও সংশোধনের ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং নিজের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সচেষ্ট হতে পারে। ফলে সে নিজেকে মানবসম্পদে পরিণত করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
মানুষ ব্যক্তি চরিত্র বিকাশের পাশাপাশি অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে জাতীয় উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোরিয়া, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়িক খাত, শিল্প বা অর্থনীতির দক্ষকর্মী তৈরিতে তারা বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতায় পারদর্শিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে মানবসম্পদ ও মানবপুঁজির তত্ত্ব (ঐঁসধহ ঈধঢ়রঃধষ ঞযবড়ৎ) বিশ্ব অর্থনীতির বহুল পাঠ্য ও স্বীকৃত বিষয়। তথ্যগতভাবে মানবপুঁজির উপযুক্ত ব্যবহার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মানবসম্পদ রপ্তানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কাজের উদ্দেশে বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা এক কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার। (বাংলা ট্রিবিউন) জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে চলতি ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসে গেছেন। বিদেশে কর্মরত এসব কর্মীর কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের ফলেই করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ সন্তোষজনক। এ ক্ষেত্রে বেশি বেশি শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি করতে পারলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে। দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রয়োজন বাস্তবসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ সম্মেলনে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, 'বাংলাদেশ মানসম্মত শিক্ষায় সারা বিশ্বের রোল মডেল হতে চায়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।' বর্তমান নতুন কারিকুলাম তারই বহিঃপ্রকাশ।
সরকারের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও আশাবাদী দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশের মাইলফলক স্পর্শ করবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরিতে সব ংঃধশব যড়ষফবৎ কে এগিয়ে আসতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
সাহেদ মুশতার
মাস্টার ট্রেইনার
ও সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজবাড়ী