শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের ভোটাররা ভোট প্রদানের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করবেন। এরপরই প্রকাশ হবে ফলাফল। সামগ্রিকভাবে প্রত্যাশা- নির্বাচন হোক সংশয়হীন, উৎসবমুখর এবং প্রশ্নহীন। তথ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তফসিল অনুযায়ী ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোট ২ হাজার ৭৪১ জন প্রার্থী। তখন নির্বাচনে ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪। তবে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকছে ২৮টি দল। আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর দলীয় প্রার্থী ১৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। উলেস্নখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই সময়কার ৩৯টি নিবন্ধিত দলই ভোটে অংশ নিয়েছিল। আর এবার বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো কোনো প্রার্থী দেয়নি। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে ভোট হচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, এর আগে নির্বাচনপূর্ব সংঘর্ষ-সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ভোট শান্তিপূর্ণ হবে কিনা এমন শঙ্কা দেখা গেছে। এবারেও নির্বাচনের আগে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এবারে সংঘাত-সহিংসতা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার। তথ্য মতে, গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে ৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮ দিনে দেশে নির্বাচনী সংঘাতে তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া লক্ষণীয়, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধির অনেক নিয়ম নানাভাবে লঙ্ঘন করেছেন প্রার্থীরা- এমন তথ্য সামনে এসেছে। এ তালিকায় আছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের লাঞ্ছিত করা ও হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা। বারবার শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানাও করেছে ইসি।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন যথাযথ আয়োজন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারাদেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সব ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন- এমনটিও জানা যায়। সুতরাং, সবকিছু মিলিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হবে এমনটি প্রত্যাশা।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না- অতীতে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির দৃষ্টান্ত আছে। আছে নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষের নজির। সুতরাং, এবারের নির্বাচন ঘিরে যাতে অতীতের কোনো নেতিবাচক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকার ও ইসির। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার তীব্র অভাব লক্ষ্য করা যায়। আমরা বলতে চাই, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন জরুরি। রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ করতে হবে। কেননা, রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের। এছাড়া স্মর্তব্য, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়টিও বারবার আলোচনায় এসেছে।

বলা দরকার, এই নির্বাচনকে অথর্বহ করে তোলার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবার। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসিকে প্রশ্নমুক্ত থাকতে হলে যেমন নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়া সঙ্গত নয়, তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোরও কর্তব্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখা। অতীতে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানান ভয়াবহতার শিকার হয়েছেন ভোটাররা। এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। রাজনীতি যেহেতু মানুষের কল্যাণেই, সেহেতু ভোটারদের শঙ্কা দূর করারও দায়িত্বও রাজনৈতিক দলগুলো অস্বীকার করতে পারে না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে, ভোটাধিকার লঙ্ঘিত হলে তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রত্যাশা থাকবে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হোক। নির্বাচন হোক প্রশ্নমুক্ত। এগিয়ে যাক দেশ ও দেশের গণতন্ত্র। রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান হোক চিরতরে- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে