এ দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ অভূতপূর্ব সফল নির্বাচন চায়। নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ ৭ জানুয়ারি। অনেক হতাশার মধ্যেও জাতির সামনে এক উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সবাই চায়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শোষণহীন বৈষম্যমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারে। নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি না হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেও। ইতোমধ্যে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উৎসবমুখর নির্বাচনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিসহ সব শক্তি একটি সুন্দর নির্বাচন বিজয়ের আয়োজনের লক্ষ্যে অভিযাত্রা শুরু করছে।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে যতদিন পর্যন্ত সুস্থ ধারা ফিরে না আসবে, ততদিন বিদেশিদের অযথা নাক গলানোর প্রবণতাও দূর হবে না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বড় দুর্বলতা যে, আমরা নিজেদের নাক কেটেও পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চাই। রাজনীতিবিদরা নিজেরা নিজেদের শুধরে না নিলে বাইরের লোকেরা কান কথা বলতে পারবে, তাতে ভালো কিছু হবে না। দেশের কল্যাণ হবে না। তাই দেশ, মা, মাতৃভূমি ও স্বাধীনতা সবার ওপরে, এটা যত মনে রাখবেন ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নির্বাচকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকে।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায়। কেননা নির্বাচন পরিচালনার সব দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। গণতন্ত্রের পূবর্শত সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে একটি সুন্দর সংসদ উপহার দিতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে বিতর্কিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশ যাতে ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেই দেশের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। গণতন্ত্র মানে আত্মমর্যাদা, ন্যায়বিচার, সুশাসন, মানবিক উন্নয়ন অর্থাৎ একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা, অস্থিরতা বা রাজনৈতিক টানাপড়েন রয়েছে। জনগণ শঙ্কামুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। এ চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের প্রাপ্তি থেকে জনগণ হোঁচট খেতে চায় না। জনগণের একটি বড় অংশ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষকে সুখী করাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। নির্বাচনকে প্রভাব ও হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সবাইকেই নির্বাচনী আইন, বিধিমালা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, প্রভাব বিস্তার, কালো টাকা, ধর্মের অপব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ানো ইত্যাদিকে কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতেই হবে।
গণতন্ত্রের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল ও শক্তিশালী বিরোধী দলের পারস্পরিক সমঝোতা-সহযোগিতা-সম্প্রীতি ও শিষ্টাচার পরিপূর্ণ আচার-আচরণ গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থবহ করে তোলে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজনে সরকারের ভুলত্রম্নটিগুলো নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরে ইতিবাচক-গঠনমূলক সমালোচনায় ঋদ্ধ হতে পারে সরকারের দেশ পরিচালনায় অনন্য সাফল্য।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ, যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
এবারে নির্বাচনে সবার প্রত্যাশা, যে সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদের নিয়েই হোক শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর একটি নির্বাচন। সাধারণ মানুষ এই নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করবে। নির্বাচনকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করা সব দল-মত নির্বিশেষে সবারই রয়েছে একান্ত দায়বদ্ধতা। অন্যথায় অরাজক, বিশৃঙ্খলায় দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।
নির্বাচন নিয়ে পুরো জাতি উৎসবের আমেজে রয়েছে। নির্বাচনের সময় শুধু রাজনীতির মাঠ সরগরম নয়, অপশক্তিরও মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- যা জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করতে পারে। বর্তমান সরকারের টানা ১৫ বছর ক্ষমতাসীন রয়েছে। এই সময়ে রাজনীতির মাঠের নানা তিক্ততা রয়েছে, নাশকতা চলমান রয়েছে।
সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে সর্বগ্রাসী করোনা মহামারি সারাবিশ্বকে এক অবর্ণনীয় দুর্যোগের মুখোমুখি করে দেয়। ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারি এখনো প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ছোবলের রেশ এখনো রয়ে গেছে।
২০২১ সাল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার দুঃসময় জানাতে খুব বেশি দেরি করেনি। বিরোধী পক্ষের কাছে এসবের যেন কোনো হিসাব-নিকাশই নেই। দেশটা সবার, রাজনীতি যারা করেন, তাদের বিবেচনায় থাকে সাধারণ জনগণ। যাদের নিরাপদ উন্নত জীবন নিশ্চিত করা রাজনৈতিক নেতাদের ধ্যানজ্ঞান হওয়াও বাঞ্ছনীয়।
২০২২ সালের ২৫ জুন বহু বিতর্কে জড়ানো পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন দেশের জন্য এক নবযাত্রা। নিজ অর্থায়নে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিস্মরণীয় সাফল্য হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকল। এ ছাড়া কয়েকশ' সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে, যা দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে অপরিহার্য।
গঠনমূলক আলোচনা পর্যালোচনায় উত্ত্যক্ত পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হলে যেই ক্ষমতায় আসুন না কেন, জনগণের সঙ্গে সবাই উপস্থিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেসব সমস্যা সর্বজনীন সেসবের উত্তরণের পথও সবাইকে মিলেমিশে একসঙ্গে করাই বাঞ্ছনীয়, সময়ের যৌক্তিক দাবিও সেটি। রাজনীতিতে শুধু ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় সামনে চলা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণে কাজ করা সবার জন্য বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে ভোটারদেরও। ভোটটা যেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে অবিচল থাকতে হবে আপনশক্তিতে। সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করায় প্রত্যেকের স্বাধীনতা রয়েছে।
নির্বাচনের আগে হত্যা ও বিশৃঙ্খলার রাজনীতি আমাদের দেশে চরম অপসংস্কৃতিতে রূপ নেয়। দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য বিচক্ষণ দলও আবশ্যক। যারা সব কালের এবং যুগের ভালো বার্তা সবার মাঝে পৌঁছে দেবে, সেটাই সুস্থ ও সুষ্ঠু রাজনীতির পদক্ষেপ।
জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির শোভা বর্ধন করে। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা যাচাই করা ঠিক হবে না। সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করছে ভোটারের অংশগ্রহণের ওপর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল চ্যালেঞ্জ ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অর্থাৎ সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। ৩০-৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি বা এমন কোনো পরিসংখ্যান আমাদের বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে সহায়তা করতে পারে না। উন্নত অনেক দেশের নির্বাচনে ৫০ শতাংশের নিচে ভোটার উপস্থিতির নজির রয়েছে। তাই পরিসংখ্যান বা সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বিদ্যমান সংকট ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
ভোটাররা যেন নিরাপদে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন, তারা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা। তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী থাকবে নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত। এর সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিতেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভোটাররা কেন্দ্রে এসে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মনেও ইতিবাচক ধারণার জন্ম হবে। তখন ভোটাধিকার প্রয়োগ না করে থাকা ভোটাররাও কেন্দ্রে আসবেন ভোট দিতে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট থাকলে এ পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিষয়ে বিভাজনের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে দলগুলোর মধ্যেও দুই ধরনের পরিচয় কাজ করে। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বকীয়তা ও নিজস্বতা থাকতে হবে। অন্য কোনো দেশের প্রতিনিধিরা এসে এসে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন এমন নজির নেই। বরং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভাজন বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে এ বিভাজন বাড়ানোর পেছনে বিদেশিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ও থাকে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংজ্ঞাসূত্রই বলে, বিদেশিরা তাদের স্বার্থ সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেন।
তাদের স্বার্থ পূরণ হলে তবেই সহযোগিতামূলক কোনো উদ্যোগ নেন। স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কৌশলগত অবস্থানই আমাদের দিতে পারে সুষ্ঠু সমাধান। মনে রাখতে হবে, বিদেশিরা তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য অনেক সময় রাজনৈতিক বিভাজনকে ব্যবহার করেন।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হতে শুরু করে। রাজনৈতিক সংকটের ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনাস্থার ফলে সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে শুরু করে। রাজনৈতিক সংকট জিইয়ে রাখা দেশ-জাতির জন্য মোটেও ইতিবাচক হতে পারে না। সুষ্ঠু-স্বাভাবিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। রাজনৈতিক সংকটের ফলে অর্থনীতি, জনজীবনসহ সামাজিক নানা খাতের বিভিন্ন সূচকে অবনতি ঘটতে শুরু করে। অর্থনীতি অতিক্রম করছে কঠিন সময়। এর ওপর রয়েছে বৈশ্বিক সংকটের ছায়া। রাজনৈতিক সংকট পর্যবেক্ষণ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারান।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের দ্বিমেরুকৃত রাজনৈতিক বিভাজন সাংঘর্ষিক রূপ ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বহু নাশকতা হয়েছে। প্রায় ৩০০-এর মতো বাস, ট্রাক পোড়ানো হয়েছে। রেললাইন কেটে ফেলা, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেক মর্মান্তিক মৃতু্যর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। আমরা এগুলোর অবসান চাই।
অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে যেসব দলের অংশগ্রহণে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং ব্যালটের মাধ্যমে প্রদত্ত জনগণের রায় বাধাহীনভাবে প্রকাশিত হোক, এটিই দেশবাসীর একমাত্র প্রত্যাশা।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন ব্যতীত সরকার পরিবর্তন বা সরকার গঠনের গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো পন্থা বা মাধ্যম নেই। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর ঘোষণা- 'সব ক্ষমতার মালিক জনগণই হবে সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু।'
সংবিধান একটি জাতির সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল, সংবিধানকে সমুন্নত রাখা একটি জাতির পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যদিকে, একটি সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বিঘ্ন ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
এরূপ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। সরকার, বিরোধীদল, প্রশাসন, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক ও জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান দুঃসাধ্য নয়। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতামূলক পরিবেশ ভোটারদের নির্ভীকভাবে ভোটদানে উৎসাহিত করবে। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সবার কাজ করে যেতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত সরকারের দায়িত্ব।
২০০১-এর নির্বাচনে এবং নির্বাচনের পর যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল সেসব দিনগুলোকে মনে রেখে যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা দুষ্টচক্র ঘটাতে না পারে, এ বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। রাজনীতিবিদরা নিজেরা নিজেদের শুধরে না নিলে বাইরের লোকেরা কান কথা বলতে পারবে, তাতে ভালো কিছু হবে না। দেশেরও কল্যাণ হবে না।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। ভোটের সঙ্গে জড়িতদের পেশাদারি, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভোটের দিনে ভোটাররা ভোট দিয়ে যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেদিকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে তিনি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক