ডিসেম্বরে ৫১৭ জনের প্রাণহানি সড়ক নিরাপদ করতে হবে

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫১৭টি। এতে ৫১২ জন নিহত এবং ৭৯৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ৫৯, শিশু ৬৪ জন। সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটর সাইকেলে। ২১৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০১ জন। দুর্ঘটনায় ১১৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হন ৫৬ জন। বৃহস্পতিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ডিসেম্বরে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ১৪ জন আহত হন। নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। ২৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী ২০১ জন বাস যাত্রী ৯ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ড্রামট্রাক-রোলার মেশিন গাড়ি আরোহী ২৬ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-পাজেরো জিপ আরোহী ১৫ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী ১০১ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী ৩০ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৬ জন নিহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৩৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৭৭টি গ্রামীণ সড়কে, ৩৭টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে তিনটি সংঘঠিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ১১৬টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দিয়ে, ৪২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করে এবং ১১টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৪১টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরে। এ জেলায় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানীতে ২৭টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছেন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়কে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা। নানা ধরনের উদ্যোগেও সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের সর্বত্রই অপরিপক্ব লোকের হাতে মোটর সাইকেল চলে গেছে, ফলে ৪০ শতাংশ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছেন। এটা সত্য, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার কারণ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটর সাইকেল চালানো; অতি উচ্চগতির মোটর সাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি; মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা; বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেটকার মাইক্রোবাসসহ দ্রম্নতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা; ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-ভটভটি ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অদক্ষ হাতে চালানো; সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা; কিশোর-যুবকদের গতির প্রতি আকৃষ্ট করতে মোটর সাইকেলের বিজ্ঞাপনের উত্তেজনাকর ভাষা-ভঙ্গি; সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা; পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং দেশে কলুষিত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকদের মধ্যে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি। তারা এতটাই বেপরোয়া যে, রাস্তায় যানজট থাকলে ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেয়। ফলে মানুষ চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় তারা ট্রাফিক সিগন্যালও মানে না। মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবেই।