শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

চা উৎপাদন বেড়েছে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চা উৎপাদন বেড়েছে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় চা খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, যদি চা উৎপাদন বাড়ে তবে তা স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক। কেননা উৎপাদন বাড়লে রপ্তানি থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবে আশাব্যঞ্জক বাস্তবতা তৈরি হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে চা উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। আর উৎপাদন বৃদ্ধিতে অনুকূল আবহাওয়া এবং সরকারের বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করেছে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত থাকলে পণ্যটির রপ্তানিও লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বাড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

আমরা বলতে চাই, একদিকে চা উৎপাদন বেড়েছে এটা যেমন ইতিবাচক তেমনি যখন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এই ধারা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি বাড়বে তখন এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার বাংলাদেশ চা বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৩ সালে দেশে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৩৬ লাখ কেজি। ২০২২ সালের একই সময় যা ছিল ৭ কোটি ৫২ লাখ কেজি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নভেম্বরেও উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। চা বোর্ড এটাও জানিয়েছে যে, গত বছরের প্রথমার্ধে ভারত ও কেনিয়াসহ বিশ্বের শীর্ষ চা উৎপাদক দেশগুলো ছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে। এর মধ্যে ভারতে চা উৎপাদন ৯ শতাংশ ও কেনিয়ায় ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় এসব দেশে উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। অন্যদিকে এ সময় বাংলাদেশে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানি আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি, রপ্তানি আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার যে সম্ভাবনা- তা যেমন কাজে লাগাতে হবে তেমনি উৎপাদনের ধারা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগী হতে হবে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ চা উৎপাদনে পিছিয়ে ছিল। পাঁচ বছর আগেও দেশে চা উৎপাদন হতো সাত কোটি কেজির কিছু বেশি। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ার কারণে দেশে চা উৎপাদনের পরিমাণ ১০ কোটি কেজির কাছাকাছি পৌঁছেছে যা ইতিবাচক। জানা যাচ্ছে, চায়ের জন্য উপযোগী পরিমিত বৃষ্টিপাত, চা চাষের জমি বৃদ্ধি ও উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা উৎপাদন বাড়ার কারণে বাংলাদেশের চা উৎপাদন নতুন গতি পেয়েছে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে চা উৎপাদন বেড়েছে। বিশেষ করে বাগানগুলোয় আধুনিক সেচ ব্যবস্থা, নিয়মিত বিরতিতে চা চাষের আওতা বৃদ্ধি, উত্তরাঞ্চলের সমতলে চা উৎপাদন বাড়ানো ও একাধিক নিলাম বাজার স্থাপনের মাধ্যমে চা বিপণনে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি উৎপাদনে ইতিবাচক ধারা ফিরিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আশাব্যঞ্জক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে যা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সরকারি নীতি অনুযায়ী দেশের চা খাতকে সুরক্ষা দিতে গত কয়েক বছর আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপ, রুগ্ন চা বাগানকে সচল করতে জোরালো উদ্যোগসহ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ- এমনটি আলোচনায় এসেছে। এছাড়া তলানিতে থাকা রুগ্ন চা বাগানগুলোকে আরও বেশি উৎপাদনমুখী করা গেলে বাংলাদেশে চাহিদার দ্বিগুণ পরিমাণ বাড়তি চা উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে এমন অভিমতও উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক বিষয় সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চা উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও আলোচনায় এসেছে যে, উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চা খাতের নানা সংকট দূর করে একটি টেকসই উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন- যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে চা খাতের সার্বিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে