জাপানে নতুন বছরের প্রথম দিনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৫৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। বহু ভবন উল্টে পড়েছে- রাস্তা, অবকাঠামো ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিদু্যৎবিহীন হয়ে রয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি জাপানের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে। তারপর থেকে আরও প্রায় ২০০ বারের মতো পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। যেগুলোর মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৬ দশমিক ১। আগামী অন্তত এক সপ্তাহের মধ্যে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভূমিকম্পের পর জাপানের পশ্চিম উপকূলের কয়েকটি অংশে সুনামি হয়েছে। ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হলে উপকূলীয় কিছু এলাকার বাসিন্দারা উঁচু স্থানে সরে যায়। পরে সুনামির ঢেউয়ে কিছু গাড়ি ও বাড়ি সাগরে ভেসে যায়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ও রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন। বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা ও এর টার্মিনাল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দরটিতে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছে ছোট শহর সুজুর পাঁচ হাজারের মতো বাড়ির মধ্যে প্রায় এক হাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ২০১৬ সালের পর থেকে জাপানের সবচেয়ে প্রাণাঘাতী ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে। জাপানি সামরিক বাহিনী বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া লোকদের খাবার, পানি ও কম্বল সরবরাহ করছে।
কিছুদিন আগে গভীর রাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল চীন। চীনের উত্তর-পশ্চিমে পার্বত্য অঞ্চলে এই ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। চীনের গানসু ও কিংহাই প্রদেশের সীমান্ত অঞ্চলে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের তীব্রতা ছিল ৫.৯। যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.২। গানসুর রাজধানী শহর লানঝাউ থেকে প্রায় ১০২ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। মাটির ৩৫ কিলোমিটার নিচে কম্পন হয়েছে। ভূমিকম্পের জেরে বহু জায়গায় আলো এবং পানীয় জলের লাইন তছনছ হয়ে গেছে। বহু জায়গায় রাস্তা এমনভাবে ভেঙেছে যে সেখানে পৌঁছানোই সম্ভব হচ্ছে না। বেশ কিছু জায়গার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। বস্তুত, এলাকাটি পার্বত্য হওয়ায় সমস্যা আরো বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে, যারা দ্রম্নত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে ত্রাণের সুপারিশ করবে। চীনের এমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রণালয় লেভেল ফোর ডিজাস্টার ঘোষণা করেছে। সেই মতো উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। তবে চীনে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছিল ২০০৮ সালে। সেবার ৭.৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে ৮৭ হাজার মানুষের মৃতু্য হয় এবং ৫ হাজারের বেশি স্কুল পড়ুয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। চীন ও জাপানের ভূমিকম্প আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।
এটা সত্য, বাংলাদেশও ক্রমশ ভূমিকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক সময়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা নেই। ভূমিকম্প সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আমরা জাপানের ভূমিকম্পে মৃতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। এই ভূমিকম্প থেকে আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে।